চট্টগ্রামের পারকি সৈকতে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ, ঢুকছে পানি

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৪, ২০: ১৯

কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ, লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের ঢেউয়ে ভেঙেছে মিনি কক্সবাজার খ্যাত চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্র সৈকতের বেড়িবাঁধ। ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পর্যটনে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে সৈকতের লুসাই পার্ক থেকে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার বেড়িবাঁধ প্রবল ঢেউয়ের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বঙ্গোপসাগরের পানি ঢুকে কয়েকটি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও ভাঙনে পড়ে গেছে প্রায় শতাধিক ঝাউগাছও।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা উপকূলকে রক্ষায় পারকি সৈকত ও আশপাশ এলাকায় ১৯৯৩-৯৪ এবং ২০০২ সালে পর্যায়ক্রমে ৮০ হেক্টর জায়গাজুড়ে ঝাউ বিথি রোপণ করে বন বিভাগ। আর্কিটেকচারাল পদ্ধতিতে লাগানো এ গাছগুলো বড় হয়ে উঠলে পরবর্তীতে পারকি পর্যটন এলাকা হিসাবে রূপ লাভ করে। বর্তমানে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এ সৈকত। বিভিন্ন সময়ে ভারী বর্ষণ, লঘুচাপ ও জোয়ারের ঢেউয়ে সৈকতের চর ও বাঁধ ভেঙে বিলীন হতে থাকে ঝাউ বিথিগুলো।

স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজারের আদলে গড়ে ওঠা এ সমুদ্র সৈকতে গত কয়েক বছরে ধরে ভাঙনে ও নিধনের শিকার হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ঝাউগাছ। আর এ বছর বেড়ি বাঁধের তীব্র ভাঙন দেখা দেওয়ার হেলে পড়েছে প্রায় শতাধিক ঝাউগাছ। এই ভাঙন অব্যাহত থাকলে বেড়িবাঁধ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। হুমকির মুখে পড়বে পর্যটন শিল্প।

উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, পারকি সৈকতের বেড়িবাঁধের ফুলতলী মৌজার ৫২৯ দাগে প্রায় সাড়ে ১০ একর জায়গা জুড়ে পানি চলাচলের জন্য একটি জলাধার ছিল। এ জলাধারটি ফুলতলী থেকে পারকি খালে এসে মিলিত হয়। এ জায়গার মালিকানা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু ভূমি অফিসের খাতায় জলাধার থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে জলাধারের কোনো অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়নি। জলাধারের জমিতে এখন প্রভাবশালীদের মৎস্য ঘের। সৈকতের বুকে সরকারি খাস জমি দখলে নিয়ে গড়ে উঠছে কয়েকটি মৎস্য ঘের। সৈকতের রিং বাঁধ কেটে মৎস্য ঘেরের পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে সৈকতের বালু ও ঝাউগাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গত বছর মাছের ঘেরের বর্জ্যের পানি বের করার জন্য সৈকতের বাঁধ কেটেছিল মৎস্যজীবীরা। এই বছর ভারী বর্ষণ, লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের ঢেউয়ে ভেঙে গেছে বাঁধটি। বাঁধটি কাটার ফলে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
 
বারশত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ূম শাহ বলেন, ‘পারকি সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছেন। সে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে চলমান রয়েছে। গত কয়েক দিনের লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের ঢেউয়ে ভেঙে গেছে সৈকতের উত্তর-দক্ষিণে বাঁধ। পর্যটন শিল্প ও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প রক্ষায় দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙনের কারণে সৈকত এলাকা ছোট হয়ে আসছে। পারকির আকর্ষণীয় স্পটগুলো ভেঙে বিলীন হচ্ছে গাছগুলো। এর আগে আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ দিয়েছি, এখন সেটিও সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহিদ বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও অনুমোদন হয়ে বরাদ্দ আসলে স্থায়ী সমাধান করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত