রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ বান্দরবানে পুলিশ কর্মকর্তার তাণ্ডব, নারী-শিশুসহ আহত ৫

বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ৫০
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ৪৭

বান্দরবান শহরের একটি রেস্তোরাঁয় খাবারের সঙ্গে মদ চেয়েছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মংনেথোয়াই ও তাঁর স্ত্রী। কিন্তু তা না পেয়ে রেস্তোরাঁর কয়েকজনকে মারধরের পাশাপাশি সেখানে ভাঙচুর চালান তাঁরা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে শহরের মধ্যমপাড়া এলাকার তোহজাহ রেস্তোরাঁয় এ ঘটনা ঘটে। এতে রেস্তোরাঁ মালিকের স্ত্রী ও শিশুসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। 

এদিকে এ ঘটনায় আজ বুধবার সকালে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী দাবি করেন, গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি আজ পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হয়েছে।

তবে তাঁর এই দাবি অস্বীকার করেন রেস্তোরাঁর মালিকের ভাই জসাই। তিনি আজ বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পার্বত্য জেলা পরিষদে আধা ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তারা সমাধানের জন্য চাপ দিয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার ছিল বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাইয়ের দ্বিতীয় দিন। কুমিল্লার এএসপি মংনিথোয়াই তাঁর স্ত্রী ও কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে তোহজাহ রেস্তোরাঁয় ঢুকে ভাতের সঙ্গে মদ দিতে বলেন। রেস্তোরাঁর মালিক শোঁয়েসাই মং তাঁদের মদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাতে চটে যান এএসপি ও তাঁর স্ত্রী।

এ সময় এএসপির স্ত্রী বলেন, ‘আমি এএসপির বউ। মদ এখনই দিতে হবে। না হলে দোকান বন্ধ করে দিব’—এই কথা বলার পর তাঁরা হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা রেস্তোরাঁর মালিক ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর শুরু করেন। এ সময় রেস্তোরাঁর মালিকের স্ত্রীর কোলে থাকা বাচ্চা মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়। মারধর থামাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন জখম হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে পুলিশ গিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়।

এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন রেস্তোরাঁর মালিক শোঁয়েসাই মং (৩২), তাঁর স্ত্রী উম্যাশৈ (২৫), তাঁদের দুই বছরের সন্তান উখ্যাই, ভাই খিংসাই মং (৩৬) ও মা পাইনুচিং (৬৫)।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের চিকিৎসক দিদার বলেন, ‘আহতদের শরীরে দাঁতের কামড়ের দাগ রয়েছে। তা ছাড়া হাত-মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা তাঁদের চিকিৎসা দিচ্ছি।’

এ ব্যাপারে রেস্তোরাঁর মালিকের ভাই জসাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মদ না দেওয়ার কারণে তারা আমাদের রেস্টুরেন্টে ভাঙচুরের পাশাপাশি মারধর করেছে। এই অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ মীমাংসা করতে বলছে।’

এদিকে এ ঘটনা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বান্দরবানে আলোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে এটাকে একজন পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার আখ্যা দিয়ে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কুমিল্লার এএসপি মংনিথোয়াই মার্মাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শুনেছি। দেখি খোঁজখবর নিচ্ছি। তারপর বলতে পারব।’

প্রসঙ্গত, কুমিল্লার এএসপি মংনিথোয়াইয়ের বাড়ি বান্দরবান শহরে। নববর্ষের ছুটিতে কুমিল্লা থেকে তিনি বাড়ি আসেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত