Ajker Patrika

জাবিতে ছাত্রশিবিরের আত্মপ্রকাশ, প্রতিবাদে মধ্যরাতে বিক্ষোভ

জাবি সংবাদদাতা
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ৪৬
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার প্রকাশ্যে এল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকি স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি থেকে জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদকের পরিচয় জানা যায়। শিবিরের আত্মপ্রকাশের প্রতিবাদে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ( ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) হারুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ( ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) মুহিবুর রহমান মুহিব এবং প্রচার সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন দর্শন বিভাগের ৪৭ ব্যাচের ( ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মুহিব এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব দলের অংশগ্রহণে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ৫ আগস্টের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সুস্থ ধারার রাজনীতি এগিয়ে নিতে ছাত্রশিবির সর্বদা প্রস্তুত। আবাসিক হলগুলোতে দখলদারি, চাঁদাবাজি, মাদকের বিস্তার রোধে ছাত্রশিবির অঙ্গীকারবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আনয়ন, গবেষণামুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়ন, সুস্থ ধারার সংস্কৃতির বিকাশ এবং নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ছাত্রশিবির কাজ করে যাবে। ছাত্রশিবির চায় ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসুক।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এই বয়ানের কোনো সত্যতা নেই। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাব এলেও এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং সভার সিদ্ধান্ত ছিল— বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়।

বিবৃতিতে শিবির নেতারা বলেন, কোনো মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না। ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধকরণ ও ট্যাগিং রাজনীতি মূলত ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহায়ক শক্তি হিসেবেই কাজ করেছে। গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী দুঃশাসনের দরুণ রাজনীতির সংজ্ঞাই পাল্টে গেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি চাই। চব্বিশের (২০২৪ সাল) শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে চলমান রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক সংস্কার হোক। ছাত্ররাজনীতির এই যৌক্তিক সংস্কারে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে শিবিরের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তামিম স্রোতের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন।

জাবিতে শিবিরের আত্মপ্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। ছবি: সংগৃহীত
জাবিতে শিবিরের আত্মপ্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। ছবি: সংগৃহীত

সমাবেশে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন বলেন, ‘১৯৭১ সালের গণহত্যার সহযোগী সংগঠন জামায়াত–শিবির। শেখ হাসিনার সরকারের হাতে যেমন ২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে খুনের দাগ রয়েছে, তেমনি ’৭১–এর গণহত্যার রক্তের দাগও জামায়াত-শিবিরের হাতে লেগে রয়েছে। এই গণহত্যার দায় তারা অস্বীকার করতে পারে না। আশির দশকেও ছাত্রশিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিকৃষ্টতম কার্যক্রম চালিয়েছে। এখন আবারও তারা পুনর্বাসিত হওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আমরা বারবার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রতিহত করে এসেছি। যার ফলে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরকেও এ দেশের ছাত্র–জনতা মেনে নেবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় বলেন, ‘১৯৭১ ও ২০২৪–এই দুই সালকে যারা অস্বীকার করবে, তাদের কখনোই জনগণ ক্ষমা করবে না। আজকে দেখলাম শিবির যে প্রেস রিলিজ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেখানে মিথ্যাচার করেছে। কবির, দিপু হত্যা, হুটহাট সশস্ত্র আক্রমণ—এগুলো নিয়ে শিবির কখনো ক্ষমাপ্রার্থী হয় না। ছাত্রশিবিরকে কোনো দিন দেখিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আন্দোলন করতে। কোনো দিন কি ওরা শ্রমিক হত্যা নিয়ে আন্দোলন করেছে? তারা সব সময় শাহবাগ আর শাপলা ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত। এ রকম বিভাজনের রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। যে রাজনৈতিক দলের হাতে রক্তের দাগ রয়েছে, সেই সংগঠনকে রাজনীতি করতে হলে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। সেটা সামাজিক বিচার হতে পারে, আইনি বিচারও হতে পারে। এর জন্য ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের ক্যাম্পাসে আসতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোন্দল, তবু আশাবাদী বিএনপি

  • চার আসনের দুটিতে বিভক্ত বিএনপি
  • ভোটারদের কাছে ছুটছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা
  • তৎপর এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন
  • এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ
হাসান মাতুব্বর, ফরিদপুর
কোন্দল, তবু আশাবাদী বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুরের চারটি আসনের সব কটিতে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন উভয় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তৎপর এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো দলগুলোও। আগামী নির্বাচনে জেলায় অন্তত ৩০ জন প্রার্থী হবেন। তাঁদের মধ্যে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদসহ অন্তত ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।

চার আসনের দুটিতেই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন। তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভোটে প্রভাব ফেলবে না। বিভেদ ভুলে

সবাই ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবে।’ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মুহাম্মাদ বদরুদ্দীন বলেন, ‘চার আসনেই আমাদের ভালো অবস্থান রয়েছে। এখন ইসলামি সমমনা ৮ দলের বিষয়ে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি মেনে নেওয়া হবে।’

ফরিদপুর-১

আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-১ আসন। তিন উপজেলার মধ্যে বোয়ালমারী ও মধুখালীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোট প্রায় সমান। আলফাডাঙ্গায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ সমর্থক। ৫ আগস্টের পর বিএনপির প্রভাব বাড়লেও দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সঙ্গে কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিবাদে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। গত ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থকেরা।

খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বহুদিন পরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ এসেছে। এটি কাজে লাগাতে দলে কোনো ভেদাভেদ না রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি।’ শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, ‘খন্দকার নাসিরকে মনোনয়ন দিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করা হয়েছে। তাঁর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, এলাকায় তাঁর কোনো ভোট নেই। যারা দলকে আজকের পর্যায়ে এনেছে, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সমর্থকদের নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. ইলিয়াস মোল্যা। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলের জেলা আমির মুহাম্মদ বদরুদ্দীন বলেন, একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ইলিয়াস মোল্যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মুফতি মো. জাকির হুসাইন কাসেমী, খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি শারাফাত হুসাইন ও ইসলামী আন্দোলন থেকে ওয়ালিউর রহমান প্রার্থী হতে পারেন। এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন হাসিবুর রহমান অপু। সাবেক ছাত্রদল নেতা আবুল বাসার খান ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ফরিদপুর-২

সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এখান থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান। এবার বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর মেয়ে শামা ওবায়েদ। নির্বাচনী প্রচারে বাবার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আমির সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন শাহ আকরাম আলী। ফরিদপুরে তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুরব্বি হিসেবে পরিচিত। ইসলামি বক্তা হিসেবেও তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। শাহ আকরাম আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আলেম-ওলামাদের সমর্থক বেশি। সেই হিসেবে চেষ্টা করছি ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী হতে। সভা-সমাবেশে যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

ফরিদপুর-৩

ফরিদপুর সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে ফরিদপুর-৩ আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের দখলে। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তাঁর মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোদাররেছ আলী ইছার অনুসারীরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফের প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সমাবেশও করেছেন তাঁরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘আমার বাবা এখান থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এটা প্রমাণিত যে ফরিদপুর সদরের মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। মানুষ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। তারা আবার বিএনপির শাসন ফেরাতে চায়।’

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুত তাওয়াব নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারে দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিমুক্ত একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। স্বতন্ত্র হলেও তাঁকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। তবে গত ১৯ অক্টোবর তাঁর গণসংযোগে বিএনপি সমর্থকদের হামলার পর তাঁকে আর মাঠে দেখা যায়নি।

খেলাফত মজলিস থেকে আমজাদ হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে কামরুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলন থেকে কে এম সারোয়ার মনোনয়ন পেতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন মোর্শেদুল ইসলাম আসিফ নামের এক তরুণ। হাতেনাতে চাঁদাবাজ ধরে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। ফরিদপুর পৌরসভায় নিজ উদ্যোগে মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ফরিদপুর-৪

ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবলু। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুর-২ আসনে হলেও দল তাঁকে এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। তাঁর বিভিন্ন সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের দেখা গেছে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভাঙ্গা উপজেলা আমির সরোয়ার হোসেন। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তিনি। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন মো. মিজানুর রহমান মোল্যা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন স্থপতি মুজাহিদ বেগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিপুকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশে আগুন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
দিপু চন্দ্র দাস। ছবি: সংগৃহীত
দিপু চন্দ্র দাস। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ডুবালিয়াপাড়া এলাকার পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দিপু যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীরাই তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কারখানায় কর্মরত ওই শ্রমিকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর মরদেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অর্ধদগ্ধ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

দিপু চন্দ্র দাস দুই বছর ধরে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেডে কাজ করছিলেন। তিনি জেলার তারাকান্দা উপজেলার রবি চন্দ্র দাসের ছেলে।

ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।’

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর নিহত দিপুর স্ত্রী মেঘনা রানী বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান আজ বাবা-হারা। অভাবের সংসার নিয়ে কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না। এই হত্যার বিচার চাই।’

আর দিপু চন্দ্র দাসের বোন চম্পা দাস বিলাপ করে বলেন, ‘আমার ভাই বিএ পাস। সে সাধারণ বাটন মোবাইল ব্যবহার করত। ধর্ম নিয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার মতো মানুষ সে নয়। উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল—এমন কথা শুনেছি। সেই কারণেই তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, কোম্পানির লোকজন চাইলে তাঁকে জনতার হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশের কাছে দিতে পারতেন। তাহলে এমন নির্মম মৃত্যু হতো না।

নিহত দিপুর বাবা রবি চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার ছেলে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করলে দেশে আইন আছে, আইনের মাধ্যমেই বিচার হতো। আমরা গরিব বলে ছেলের জীবন রক্ষা করতে পারিনি।’

এদিকে এই ঘটনার জেরে গতকাল শুক্রবার নিহত দিপুর ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে ভালুকা মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন। গতকাল বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভালুকা মডেল থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৭ ঘণ্টা পর ঝালকাঠির অবরোধ প্রত্যাহার, যান চলাচল স্বাভাবিক

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি অংশে অবরোধ সাত ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি অংশে অবরোধ সাত ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁর নিজ জেলা ঝালকাঠিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। সাত ঘণ্টা পর পুলিশের অনুরোধে আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আজ জুমার নামাজ শেষে বেলা আড়াইটার দিকে বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি কলেজ মোড় এলাকায় অবরোধ শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের উভয় পাশে বিপুলসংখ্যক যানবাহন আটকে পড়ে। ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, জরুরি ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল বহনকারী যান চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়।

অবরোধ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম মান্না, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক আল তৌফিক লিখন, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি, সদস্যসচিব রাইয়ান বিন কামাল, গণঅধিকার পরিষদ ঝালকাঠি জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঝালকাঠি-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম সাগরসহ অন্য নেতারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝালকাঠি জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোদ্ধাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। হামলাকারীদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঝালকাঠি সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বেলায়েত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেলা আড়াইটায় অবরোধ শুরু হওয়ায় বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করা হলে তাঁরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারে সম্মত হন। পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

দিনাজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৪
সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সেতাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আসলাম হোসেনের বোচাগঞ্জের বাড়িতে আগুন দিয়েছেন একদল লোক। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সেতাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আসলাম হোসেনের বোচাগঞ্জের বাড়িতে আগুন দিয়েছেন একদল লোক। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সেতাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আসলাম হোসেনের বোচাগঞ্জের বাড়িতে আগুন দিয়েছে একদল লোক। আজ শুক্রবার রাতে দুজনের বাড়িতে আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে বোচাগঞ্জ থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় জনতা ও বোচাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সেতাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আসলাম হোসেনের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তবে কারা আগুন দিয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

বোচাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সাব-অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রাত সোয়া ৮টার দিকে সাবেক মেয়র আসলামের বাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা সেখানে পৌঁছাই। বর্তমানে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছে।’

এ ছাড়া খালিদ মাহমুদের বাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত