সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে ২ দিনের আলটিমেটাম

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ৫০
Thumbnail image
পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এই আলটিমেটাম দেয় তারা।

কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ ও পর্যটন মৌসুম, পর্যটক যাতায়াত সীমিত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নভেম্বর মাসে সেন্ট মার্টিনে কোনো পর্যটক রাত্রি যাপন করতে পারবে না। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দিনে দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন এবং রাত্রি যাপন করতে পারবেন। আর ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্ট মার্টিনে সরকার পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রাখবে—এতে পর্যটনশিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ উদ্যোক্তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।’

রাফেউজ্জামান আরও বলেন, সেন্ট মার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস করে। এরা সবাই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। সেন্ট মার্টিনে পর্যটন সীমিত হলে অথবা বন্ধ করা হলে, এরা সবাই বেকার হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের আর্থিক বিনিয়োগ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে।’ এ সময় তিনি সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণকে নির্বিঘ্ন ঘোষণা করার জোরালো দাবি জানান।

টোয়াব সভাপতি বলেন, ‘আমরা সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে চাই, তবে পর্যটন বন্ধ করে দিয়ে নয়, বরং পরিবেশের অনুকূলে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আগামী দুই দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি প্রদান করা হবে।’

কর্মসূচিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোটের চেয়ারম্যান শিবলুল আজম কোরেশি বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করে রাত্রিযাপনসহ যাবতীয় বিধিনিষেধ ব্যতিরেকে পর্যটন চালু রাখা এবং টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে বিকল্প পথ তৈরি করতে হবে।’

শিবলুল আজম আরও দাবি করেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে পর্যটন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। দ্বীপে লোনা পানি মিঠা পানিতে পরিণত করার নিমিত্তে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে। পচনশীল বর্জ্য ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বায়োগ্যাসে পরিণত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দ্বীপে জেনারেটর ব্যবহার বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে এবং ইট, বালু, সিমেন্ট, রড ব্যবহার করে স্থায়ী স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোটের প্রচার সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হলে জনমনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হবে এবং দ্বীপবাসীসহ পর্যটন ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত সব ক্ষুদ্র ও বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়বে। অসংখ্য পেশাজীবী তাদের চাকরি হারাবে এবং লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে পড়বে। যা এতদঞ্চলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। ফলে সামগ্রিক ক্ষতি বিবেচনায় সরকারকে আমরা এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ করছি।’

সভায় ই-ট্যাব সভাপতি ইমরানুল আলম বলেন যদি সেন্ট মার্টিন বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে যাবে। তিনি সেন্ট মার্টিন–সম্পর্কিত সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) নেতৃবৃন্দ, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের নেতৃবৃন্দ, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোটের নেতৃবৃন্দ, ই-ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ট্যাব) নেতৃবৃন্দ, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা, সেন্ট মার্টিন হোটেল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সেন্ট মার্টিন, সেন্ট মার্টিন দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বোট মালিক সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ, মৎস্যজীবী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ স্লিপার এসি বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, জাহাজমালিকদের সংগঠন সি-ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কুয়াব) নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত