শত বছরের মুড়ি-মুড়কির হাট লোহাই

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ২০: ০৮

শতাধিক বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের লোহাই বাজারে যাত্রা শুরু। উপজেলার আশপাশের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় সপ্তাহে দুদিন শুক্র ও সোমবার। এই বাজারের ঐতিহাসিক রুচিশীল প্রসিদ্ধ খাবার মুড়ি-মুড়কি। শতাধিক বাহারি মুড়ি-মুড়কির পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। 

আশপাশের পঞ্চাশেরও বেশি গ্রামের মানুষ আসেন এ হাঁটে। মুড়ি-মুড়কি না খেয়ে হাট থেকে চলে যাওয়া লোকের সংখ্যা খুবই কম। সঙ্গে এ হাটে রয়েছে মুড়ির তৈরি বিভিন্ন রকমের মোয়া। 

এ ছাড়াও বাহারি প্রসিদ্ধ খাবারের তালিকায় রয়েছে, নিমকি, চেপটি, মোড়ালি চানাচুর, গজা, চমচম, খাগড়াই, কদমা মুড়ি মুড়কি, বাতাসা, লাল গুড়ের জিলাপি, বাদাম, চিড়ার মোয়া, গুড় মাখা খই-মুড়িসহ আরও কত–কি খাবার। 

লোহাই বাজার গিয়ে দেখা যায়, বাজারের বেশ কিছু অংশ নিয়ে দোকান সাজিয়ে বিক্রি করছে মুড়ি-মুড়কি। বিভিন্ন রং বেরংয়ের রুচিসম্মত বাহারি মুড়ি-মুড়কি খেতে বসেছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কাঠার টোলে বসে আয়েশি ভঙ্গিতে মজা করে খাচ্ছেন মুড়ি মুড়কি। অনেকেই খেয়ে বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে। 

কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে প্রচুর পরিমাণ বেচাকেনা চলছে। রং বেরংয়ের প্রসিদ্ধ খাবার খেতে এ হাটে আসে দূর দুরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ। সন্ধ্যার পর থেকে দোকানে বেচাকেনার দুম পড়ে বলে জানিয়েছেন মুড়ি মুড়কি বিক্রেতারা। 

 গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের লোহাই বাজারের মিষ্টির দোকানসপ্তাহে প্রতি শুক্রবার লোহাই বাজারে আসেন টাঙ্গাইলের গরু ব্যবসায়ী ইজ্জত আলী। লোহাই বাজারে একটি দোকানে কাঠার টোলে বসে মুড়ির মোয়া খাচ্ছিলেন। কথা তার সঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০ বছর যাবৎ লোহাই হাটে আসা হয়। আর হাটে আসলে সুযোগ করে মুড়ি-মুড়কি খাই।’ 

স্থানীয় একটি পোশাক কারখানা কর্মকর্তা রুহুল আমিন গাজী জানান, হাটে আসলে প্রথমে সন্তানের বায়না পূরণ করতে যান মুড়ি-মুড়কি মহলে। সেখান থেকে পছন্দ মতো মুড়ি-মুড়কি কিনে ফিরতে হয় তাঁকে।

বাহারি মুড়ি-মুড়কি দোকান সাজিয়ে বসেছেন রঞ্জিত রায়। সপ্তাহে দুদিন আসেন এ হাটে। ৩০ ধরনের মুড়ি-মুড়কি রয়েছে তাঁর দোকানে। দুপুরের পর থেকে বেচা-কেনার ধুম পড়ে, চলে মধ্য রাত পর্যন্ত। বেচা-কেনার কোনো সময় কমতি হয়নি এই হাটে। 

আনোয়ার হোসেন নামের দোকানি জানান, আখের গুড় দিয়ে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে তৈরি করা হয় এসব খাবার। সারা রাত ধরে নিমকি, চেপটি, মোড়ালি ও তক্তি তৈরি হয়। সকালে হাটে এসে এগুলো সুন্দরভাবে বাঁশের তৈরি ডালার মধ্যে সারি সারি সাজানো হয়। অনেক দূর দুরান্ত থেকে মানুষ গাড়িতে করে নিয়ে যায় এসব মুড়ি-মুড়কি। 

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু বলেন, এটি ঐতিহাসিক হাট। এই হাটে কম করেও হলেও শতাধিক মুড়ি-মুড়কির দোকান রয়েছে, হরেক রকমের মুড়ি মুড়কি সাজানো হয় দোকানগুলোতে। 

লোহাই হাটের ইজারাদার মোসলেম উদ্দিন বলেন, এটি আশপাশের পঞ্চাশের বেশি গ্রামের মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় হাট। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার বসে এ হাট। এই হাটে মুড়ি-মুড়কি জন্য বহু বছর থেকে জনপ্রিয়। এ ছাড়াও এই হাটে বসে বড় গরু-ছাগলের হাট। রয়েছে বড় মাছ বাজার, দেশীয় মাছের এক বিরাট হাট লোহাই। 

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, ‘এই হাট শত বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় বাসিন্দা ও আশপাশের বহু গ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। এই অঞ্চল নগরায়ণ হওয়ার আগেই তার ঐতিহ্য ছিল, আজও আছে। আমি নিজেও এই হাটে দুদিন যাই। মুড়ি-মুড়কি বেশ ঐতিহ্য রয়েছে মানুষের মুখে। আমি কিনি এই মুড়ি-মুড়কি।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত