সুন্দর বক্স আকৃতির একটি মেশিন, যেখানে বিপুল পরিমাণ ডলার রাখা আছে। সেসব ডলারের সমপরিমাণ টাকা ওই বাক্সে রাখা হলে সেই টাকাও ডলারে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। এভাবেই অভিনব কৌশলে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। অনেকেই এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হারিয়েছে। চক্রটি মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যেত। গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১১ বিদেশি নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ডলার ট্রিক মেশিন, সিলভার কাপড়ে মোড়ানো আঠারোটি বান্ডেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৭টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, কেমিক্যালের বোতল, বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি উদ্ধার করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তারকৃতেরা হলেন হেনরি ওসিতা ওকেচুকু, চিসম ইমানুয়েল ওবাইজুলু, ওকাকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, ওনেকা এমবা, চিছম এন্থনি ইকুয়েনজে, ওকেয়া আজুবিকে, অনুয়ারাহ ওযুয়েমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফ্রান্সিস, লুকে, ডোমাডু চিনেডো এবং বাংলাদেশি সহযোগী ভুয়া কাস্টমস অফিসার চাঁদনি আক্তার। 

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, চক্রের সদস্যরা অভিনব ‘ডলার ট্রিকের’ বাইরেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খুলে বিভিন্ন প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। বন্ধু হিসেবে কারও সঙ্গে সখ্য তৈরি করে উপহার পাঠানোর নামে কিংবা বিনিয়োগের প্রলোভনে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। 
 
প্রতারক চক্রটির প্রধান নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওসিতা ওকেচুকু এবং চিসম ইমানুয়েল উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এই দুজনই মূলত বাংলাদেশী সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত টাকা গ্রহণ ও প্রতারক চক্রের মধ্যে বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন। অন্যান্য বিদেশি সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা করে থাকেন।’ 

চক্রটি মূলত ৩টি উপায়ে প্রতারণা করে থাকে উল্লেখ করে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা ভুয়া ডলার বাক্স উল্লেখ করে একটি মেশিন দেখায়। এই বাক্সে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল বড় বড় ব্যাংকের সীলযুক্ত ডলার ব্যবহারের উপযোগী করার কথা বলে প্রতারণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে সুকৌশলে তারা দু-একটি ডলার ব্যবহারের উপযোগী করেছে এ রকম ভেলকি দেখায়।’  

পরে তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ডলার আছে এবং তার সমপরিমাণ টাকা পাওয়া গেলে সেই সব টাকা ও ডলার একই মেশিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার জন্য রেখে দিলে টাকাগুলো ব্যবহারের উপযোগী ডলারে রূপান্তরিত হবে বলে জানায়। এই প্রলোভনে তাদের হাতে টাকা তুলে দিলেই তা নিয়ে সটকে পড়তেন চক্রের সদস্যরা। 

এর বাইরে তারা ফেসবুকে বিভিন্ন বিদেশি পুরুষের আইডি খুলে মহিলাদের সঙ্গে এবং বিভিন্ন বিদেশি মেয়েদের নামে আইডি খুলে পুরুষদের সঙ্গে চ্যাটিং করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অনেক ক্ষেত্রে তার অঢেল সম্পত্তির কিছু অংশ বাংলাদেশি বন্ধুকে প্রদান কিংবা দামি গিফট পাঠানোর ফাঁদে ফেলে। গিফট হিসেবে আসা হাজার হাজার পাউন্ড বা ডলার ছাড়াতে সুযোগ বুঝে ১০-১২ লাখ টাকা দাবি করেন ভুয়া কাস্টমস অফিসার চাঁদনি। 

প্রতারণার আরেকটি কৌশলের কথা উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রের সদস্যরা ইউরোপ-আমেরিকার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। একপর্যায়ে বাংলাদেশে গিফট পাঠিয়েছে অথবা টার্গেট ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক অংশীদার করার কথা বলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিত।