তৈরি পোশাক খাতে এই অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে: উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১: ১৫
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১: ২৩
উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শিল্প খাতে একধরনের অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এই অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পতিত সরকার ও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র কিছু অস্থিরতা তৈরি করছে। কিছু সমস্যা শ্রমিকেরা না বুঝে করছেন।

আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাল্টিপারপাস হলরুমে ‘গণতন্ত্রেও পথে চলি একসঙ্গে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা’ প্রকল্পের উদ্যোগে নাগরিক উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকেরা সমস্যা তৈরি করছেন না। তাঁদের দিয়ে সমস্যা তৈরি করানো হচ্ছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং যারা দেশের বাইরে থেকে অস্থিরতা তৈরির ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’

সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কীভাবে নির্বাচনকে নষ্ট করতে হয়, তা নিয়ে পিএইচডি করতে দেশের বাইরে যেতে হবে না। এই নির্বাচন ছিল গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক। আমি আগেই বলেছিলাম, ওই নির্বাচনে যারা অংশ নেবে তাদের আম-ছালা দুই-ই যাবে। যারা অংশ নিয়েছিল তাদের পরিণতি ইতিমধ্যে দেখা গেছে। তারা রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো ধ্বংস করেছে।’

১৫ বছরের জঞ্জাল ১৫ মাসে শেষ করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোট ছিল একটি উৎসব। কিন্তু গত ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচন তখনই গ্রহণযোগ্য হয়, যখন তা অংশগ্রহণমূলক হয়। অংশগ্রহণ মানে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, ভোটারদেরও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হয়। আশা করি আগামী নির্বাচন যখনই হোক, তা একটি ব্যতিক্রমী নির্বাচন হবে। আগামী দিনে যে নির্বাচন হবে, তাতে যারা অংশ নেবেন, তাঁরা নিশ্চয় গত তিনটি নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। যদি শিক্ষা না নেন, তাহলে তা দুর্ভাগ্যজনক।’ যাতে কারও ভোট ছিনতাই না হয়ে যায়, সে জন্য নাগরিকদের ভোটাধিকার নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের সভাপতি দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার গণ-অভুত্থান গণতন্ত্র বিকাশের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা রক্ষায় জনগণকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে। না হলে গণতন্ত্র আবার চুরি হয়ে যেতে পারে।

২০২৫ সালে একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। সেটি কী? উপস্থিতি ব্যক্তিদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন বদিউল আলম মজুমদার। তখন সেখান থেকে বেশির ভাগ বলেন, নির্বাচন। তখন বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘যদি নির্বাচন হয়, তাহলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। নিজেদের অবস্থান থেকে নিজে এবং অন্যদেরও যুক্ত করতে হবে। আমাদের সংস্কার নিয়ে সারা দেশে কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমরা সবাই দায়ী। রাজনৈতিক দলগুলো এ ক্ষেত্রে বেশি দায়ী। তারা যেসব অঙ্গীকার করেছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন। এটি চাপিয়ে দিলে হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ থেকেই সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে নাগরিকেরা সোচ্চার না হলে কোনো কিছুই সফল হবে না। এই রাষ্ট্রের মালিক হলো জনগণ।’

সবাই চায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসুক—এমন মন্তব্য করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘১৭ ডিসেম্বর আদালতের রায় আছে। আশা করি রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসবে। এটা যাতে আর কখনো বাতিল না হয়, সে জন্য সবাইকে ওয়াচ ডগের ভূমিকা পালন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, মানুষের মধ্যে অধিকার সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। ভোট মানুষের জন্মগত অধিকার। গণতন্ত্রের চেতনা জাগ্রত থাকলে শাসনতন্ত্র ও আইনের প্রয়োজন হয় না। আর সেই চেতনা মরে গেলে শাসনতন্ত্র ও আইন দিয়েও তা জাগানো যাবে না। তিনি বলেন, মানুষ এখন স্বাধীনতার যে স্বাদ পাচ্ছে, তা ধরে রাখার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হওয়া অত্যন্ত জরুরি। জনগণ নির্বাচন নিয়ে সচেতন হলে, সোচ্চার হলে সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয় না।

দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) যৌথ আয়োজনে দেশের ৩০টি জেলায় প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত মাঠপর্যায়ের প্রতিনিধি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরা, উন্মুক্ত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এ ছাড়া অলিম্পিয়াডে বিজয়ী ১১ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। নাগরিক উৎসবটি সঞ্চালনা করেন প্রকল্প ম্যানেজার দিলীপ কুমার সরকার।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত