প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার আসামি পালিয়ে ৮ বছর ইমামতি করেন, দুই বছর ছিলেন প্রভাষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২২, ১৮: ০৮
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১৮: ২৩

দীর্ঘ ২২ বছর পর গ্রেপ্তার হলেন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার পলাতক আসামি শেখ মো. এনামুল হক। গতকাল শনিবার রাতে র‍্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ রাজধানীর উত্তরায় যৌথ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। 

 ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এনামুল হক। ব্যবসায়ী ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের ছদ্মবেশে চলাফেরা করতেন তিনি। আট বছর ছিলেন একটি মসজিদের ইমাম, দুই বছর ছিলেন প্রভাষক। 

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে র‍্যাব সম্প্রতি নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে জঙ্গি শেখ মো. এনামুল হক ওরফে শেখ মো. এনামুল করিমকে (৫৩) গ্রেপ্তার করা হয়।’ 

র‍্যাব কমান্ডার জানান, ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভার অদূরে এনামুল হকসহ অন্যরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গ্রেপ্তার শেখ মো. এনামুল হকসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও তৎকালীন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির আমির মুফতি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে এনামুলের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ শহরে বিসিক শিল্পনগরীতে মুফতি হান্নানের ছোট ভাই আনিসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি প্লট বরাদ্দ নিয়ে সোনার বাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন তাঁরা। মুফতি হান্নান ও অন্য জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালের জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার তাঁর কারখানা পরিদর্শন করতে যান। সে সময় মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে তাঁর কয়েকবার গোপন বৈঠক হয়।

 মুফতি আব্দুল হান্নানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেন এনামুল হক। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁদের কারখানায় সাবান তৈরির রাসায়নিক সংগ্রহের আড়ালে বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরক দ্রব্য ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি জমা করেন। পরে লোহার ড্রামের ভেতর দুটি শক্তিশালী বোমা রেখে কোটালীপাড়ার জনসভার একটু দূরে পুঁতে রাখেন। 

এ ঘটনার পরই এনামুল হক আত্মগোপনে যান বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, হত্যাচেষ্টার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে প্রথমে তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আত্মগোপন করেন। পরে সেখান থেকে পরিচয় গোপন করে কারি না হয়েও কারি পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে আট বছরের বেশি সময় ইমামতি করেন। সেখানে তিনি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেন। 

র‍্যাব কমান্ডার মঈন আরও বলেন, গাজীপুরে থাকাকালীন একটি হোমিওপ্যাথি কলেজে দুই বছর প্রভাষক ছিলেন বলেও জানিয়েছেন এনামুলহ হক। পরে গাজীপুর হোমিও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বলে পরিচয় দিতেন। ২০১০ সাল থেকে ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করেন। ২০১৫ সালে উত্তরায় ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামে একটি ভুয়া হোমিও প্রতিষ্ঠান চালু করেন। পাঁচ বছর চালিয়ে ২০২০ সালে কলেজটি বন্ধ করে ক্যানসার নিরাময় কেন্দ্র নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। সেখানে ক্যানসারের হারবাল চিকিৎসা দিতেন। 

গ্রেপ্তার এনামুল হক ক্যানসার ছাড়াও এইডস, হেপাটাইটিস-ভাইরাস, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস, মেদ, বন্ধ্যত্ব, টিউমার, হার্ট, কিডনি, যৌন, মানসিক রোগসহ বহুবিধ রোগের সফল চিকিৎসক হিসেবে দাবি করতেন বলে জানান খন্দকার আল মঈন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানিয়েছেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত