বিক্ষোভের মুখে আবার শতাধিক কারখানা বন্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
Thumbnail image

পোশাক, সিরামিক এবং ওষুধশিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে যৌথ বাহিনী নামার পরও গতকাল বুধবার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এর জেরে গাজীপুরের ৬০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে ৫০টির বেশি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা গতকাল এই সংকট নিয়ে কথা বলেছেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের মূলে বেশির ভাগই বহিরাগত। আর শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পোশাক খাতে অস্থিরতার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপিয়েছেন।

বেতন বৃদ্ধি, শ্রমিকদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার, চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ, শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য এবং পুরুষ শ্রমিকদের বিনা নোটিশে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল সকালে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। গতকাল মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা, সাইনবোর্ড, জিরানী বাজার, কোনাবাড়ী, বাসন, জেলার বাঘের বাজার, শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় কমপক্ষে ৪টি কারখানায় ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে গাজীপুরের ৬০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয় গতকাল। একই সঙ্গে কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় ট্রান্সকম বেভারেজের শ্রমিকেরাও বিভিন্ন দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে এসব এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এ ছাড়া গাজীপুরে গতকাল সিরামিক কারখানার শ্রমিকেরাও বিক্ষোভ করেন। গাজীপুরের নয়নপুর এলাকায় আর এ কে সিরামিক ও শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আর এ কে সিরামিক বিডি লিমিটেডের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত ভারতীয়দের অপসারণ ও মেধার ভিত্তিতে বাংলাদেশিদের নিয়োগসহ 
১১টি দাবি জানিয়েছেন।

সিরামিক ও পোশাক কারখানার পাশাপাশি ওষুধ কারখানাতেও চলছে বিক্ষোভ। গতকাল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস (ওষুধ উৎপাদনকারী) কারখানায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। এর আগে বিভিন্ন সময় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও এপেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, নুভিস্তা ফার্মা লিমিটেডের শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছেন।

এদিকে ঢাকার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন দাবিতে পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা গত সোমবার থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করছেন। গতকাল আশুলিয়ার আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল ও জিরাবো-বিশমাইল সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।

এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে গতকাল বুধবারও আশুলিয়ায় অর্ধশতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই এলাকার পোশাক কারখানার মালিকেরা বলছেন, কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা যেকোনো সময় কারখানায় ভাঙচুর করতে পারেন। এই শঙ্কা থেকেই তাঁরা কারখানা ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন।

তবে শিল্প পুলিশ-১ (আশুলিয়া)-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘মালিকেরা এখন কথা শুনছেন না, শ্রমিকেরাও শুনছেন না। এখন তো একটা পরিবর্তিত অবস্থা, তাই না। আমাদের কো-অপারেট করছেন না তাঁরা।’ 

যা বলছেন উপদেষ্টারা
এদিকে পোশাক, সিরামিক এবং ওষুধশিল্পের শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণ উল্লেখ করে গতকাল সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তাদের অধিকাংশই বহিরাগত। তাদের মোকাবিলায় একটু কঠিন হতে হবে। কারখানা, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে কিছুসংখ্যকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সে বিষয়ে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

আর শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে একাধিক সভা হয়েছে। সব শ্রমিকনেতার কাছ থেকে জানা গেছে, শ্রমিক আন্দোলনের প্রকৃতিটা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারছেন না। কারণ, এখানে কোনো নির্দিষ্ট দাবি বা কোনো নির্দিষ্ট দফা পাওয়া যাচ্ছে না। 

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও সাভার এবং গাজীপুর, শ্রীপুর, সাভার প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত