মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস: ইউপি চেয়ারম্যান, চিকিৎসকসহ গ্রেপ্তার ৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১: ২৮

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পাঁচজন চিকিৎসকসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রটি মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির মুখপাত্র বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত সোমবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত দিনাজপুর, নীলফামারী ও ঢাকা জেলায় অভিযান চালিয়ে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নং সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

বাকি গ্রেপ্তারেরা হলেন—নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিংয়ের পরিচালক আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু, ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল, মো. রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ, ডা. মো. সোহানুর রহমান সোহান এবং ডা. তৌফকিল হাসান রকি। পৃথক আরেকটি অভিযানে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন ডা. ফয়সাল আলম বাদশা ও ডা. ইবরার আলম। 

সিআইডি জানায়, এর আগে এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুর কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরি থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের সন্ধান মেলে। গ্রেপ্তার চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ২০১০ সাল থেকে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। চক্রটির মাস্টার মাইন্ড জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। সাজ্জাদ ২০১৭ সালের মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের অন্য আরেকটি মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি। সাজ্জাদ উত্তরবঙ্গের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে কোটি টাকার ওপরে আয় করেছেন। আগে গ্রেপ্তার একাধিক আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সাজ্জাদের নাম বলেছে এবং জসীমের গোপন ডায়েরিতেও তার নাম ও ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। 

গ্রেপ্তার আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস নামের একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। এছাড়াও তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। আগে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি ডা. জিল্লুর হাসান রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তার ডা. সোহানুর রহমান সোহান বিট’স কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবদুল হাফিজ হাপ্পুর কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্ন পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। 

গ্রেপ্তার ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে ২০১০ সালে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান লাভ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর যক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইলান্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ডা. ফয়সাল পরবর্তীতে প্রশ্ন ফাঁস ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। গ্রেপ্তার ডা. তৌফিকুল ইসলাম রকি আগে প্রেপ্তার হওয়া আসামি ডা. জিল্লুর হাসান রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। তারা দুজনই রংপুর মেডিকেল থেকে পাস করেছেন। সেই সুবাদে প্রশ্নফাঁসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। রকি বিট’স কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন। রকি, হাপ্পু এবং রনি মিলে অনৈতিক উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ডা. রনি জবানবন্দিতে ডা. রকির কথা বলে গেছেন। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা গ্রেপ্তার আসামি ডা. ইবরার আলমও ডা. জিল্লুর হাসান রনির সহযোগী ছিলেন। তার কথাও ডা. রনি স্বীকারোক্তিতে বলে গেছেন। ইবরার ২০১৩ এবং ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ডা. রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তা সরবরাহ করেছিলেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। গ্রেপ্তার আসামি রায়হানুল ইসলাম সোহান এবং বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। দুজনই একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রায়হানুল ২০১৫ সালে তার এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পায় এবং বকুলকে তা সরবরাহ করে। বকুল তার ৪ ভর্তি–ইচ্ছুক ছোট ভাইয়ের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করে। ৪ জনই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। গ্রেপ্তার ডা. সাইফুল আলম বাদশা ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি করিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত