ঢাবিতে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড–টিয়ার শেলে ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৬: ৫১
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৮: ২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রতীকী কফিন মিছিল করছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বিকেল ৪টার পর শুরু হওয়া এই মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছেন। 
 
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গতকাল নিহত ৬ জনের গায়েবানা জানাজা শেষে বিকেল চারটা ১০ মিনিটে চার-পাঁচটি কফিন নিয়ে মিছিল শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ভিসির বাসভবনের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রম করে তার এগিয়ে যায়। 

এ সময় পুলিশকে উদ্দেশ করে তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি দিতে থাকে। একপর্যায়ে মিছিলটি বেগম রোকেয়া হলের সামনে এলে পুলিশ মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এর জবাবে শিক্ষার্থীরাও পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। এরপর মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় একাধিক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। 

এদিকে, থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায়। ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত এলাকায় বিপুলসংখ্যক সাঁজোয়া যান এনে রাখা হয়েছে। টিএসসিতে পুলিশের রায়ট কার ও জলকামান দেখা গেছে। অপরদিকে, ক্যাম্পাসের ভেতরে—এখনো এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত—প্রবেশ করছে পুলিশের গাড়ি। এসব গাড়িতে করে নারী পুলিশ সদস্যেদের ক্যাম্পাসে আসতে দেখা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, র‍্যাব, দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে বিজিবির গাড়ি। ভিসি চত্বরে অবস্থান করছেন কিছুসংখ্যক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। তবে ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মীকে ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। 

এর আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার পরপরই আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে প্রথমে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের পুলিশ সরিয়ে দেয়। পরে তাঁরা ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন। তাঁরা জানান, কোটার বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস ছাড়বেন না। 

দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শহিদুল্লাহ হলের দিক থেকে আসা শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল টিএসসিতে জমায়েত হতে চাইলে পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা ধাওয়া দেন। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দও শোনা যায়। পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে নিউমার্কেট ও ঢাকা মেডিকেলের দিকে চলে যায়। 

রোকেয়া হলের সামনে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া বেলা আড়াইটায় টিএসসির ডাস চত্বরের পাশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেনসহ তিনজন এসে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের চলে যেতে বললে সেখানে তাঁরা শুয়ে পড়েন। এ সময় সাংবাদিকেরা তাঁদের চারদিক ঘিরে দাঁড়ান। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাঁরা সেখানে অবস্থান করলে পুলিশ কিছুক্ষণ পর সরে যায়। 

সাংবাদিকেরা চলমান আন্দোলন সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য নেওয়ার সময় পুলিশের দিক থেকে জটলা উদ্দেশ্য করে চার–পাঁচটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে আজকের পত্রিকার সাংবাদিক আহমেদ শাবিব আবদুল্লাহসহ দুজন আহত হন। এ সময় সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে আখতার হোসেনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। আটকের সময় তাঁকে মারধরও করা হয়। 

কাভার্ড ভ্যানের ভেতর থেকে আখতার হোসেন বলেন, ‘সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, এর দায় সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত