ঢামেক প্রতিবেদক ও উত্তরা প্রতিনিধি
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে আজ রোববার সহিংসতায় রাজধানী ঢাকায় ১১ জন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মোট সাতটি মরদেহ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি মরদেহ নথিভুক্ত করা হয় এবং তিনটি মরদেহ নথিভুক্তর আগেই বিক্ষোভকারীরা নিয়ে চলে যান।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, চারটি মরদেহ নথিভুক্ত করা হয়েছে। আহত ২৩৪ জন চিকিৎসা নিতে আসেন, এর মধ্যে ৬৭ জন ভর্তি রয়েছে।
ঢামেকে নথিভুক্ত চারজনের তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন—জিগাতলায় গুলিবিদ্ধ আব্দুল্লাহ সিদ্দিকি (২২) ও অজ্ঞাত (১৮), ফার্মগেটে গুলিবিদ্ধ তাহেদুল ইসলাম (২২) এবং কারওয়ান বাজারে গুলিবিদ্ধ রমিজুদ্দিন রওফ (২৪)। এছাড়া বাকি তিন জনের নাম জানা যায়নি। তাঁদের বয়স আনুমানিক ১৪ থেকে ২৫ এর মধ্যে। তাঁরা সকলেই রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হন।
এদিকে রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাবিব হাসানের চাচাতো ভাই ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিয়ার মো. আনোয়ারুল ইসলাম (৬২)-সহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন—উত্তরা ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম, দক্ষিণখানের ৪৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সাত্তার এবং অজ্ঞাত দুই যুবক।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার রাজলক্ষ্মী থেকে বিএনএস সেন্টার পর্যন্ত সড়কজুড়ে বেলা ১১টার দিকে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরার আজমপুরে পুলিশের পাশ থেকে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাত্রদের বাধা দিলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ গুলি ছুড়তেও দেখা যায়। পরে আন্দোলনকারীরা তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর পরই উত্তরার আজমপুরের রাজউক কর্মাশিয়াল কমপ্লেক্সের নিচে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আজমপুরের রাজউক কর্মাশিয়াল মার্কেটের নিচ তলার ঢাকা মেডিসিন কর্ণারের নিচে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিহত হয়ে রাস্তায় এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেখানে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করে বলেন, ‘আজমপুরে আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। সেখানে আমাদের দুই ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায়। পরে দুজনের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আরেকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
নিহতের বিষয়ে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত গোয়েন্দা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গুলি করে। তাঁদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরাও রয়েছে। গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছে।’
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দাবি, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে থাকা জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম নিহত হন।’
তাঁরা বলেন, ‘হামলার পর আমাদের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে গাড়িতে করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম তোফাজ্জল হোসেন। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণখানের ৪৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সাত্তার। চলে যাওয়ার সময় দুপুর দেড়টার দিকে বিএনএস সেন্টার এলাকায় ছাত্রদের সঙ্গে থাকা জামায়াত-শিবিরের লোকজন হামলা চালায়। হামলায় তোফাজ্জল হোসেন আহত হলেও মারা গেছে তাঁর সঙ্গে থাকা আব্দুস সাত্তার।’
নিহত ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলামের ছোট ভাই ও উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন আল সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইঞ্জিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়ের হাত-পায়ের রগ ও কান কেটে দিয়েছে জামায়াত-শিবিরের লোকজন। এছাড়াও তাঁর বুকের ডান পাশে দুটি গুলি করে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেড়টার দিকে বিএনএস সেন্টার এলাকায় দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম তোফাজ্জল হোসেনের ওপর হামলা করে দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় তিনি আহত হন এবং তাঁর সঙ্গে থাকা দক্ষিণখানের ৪৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সাত্তার নিহত হন।’
আলাউদ্দিন আল সোহেল বলেন, ‘আমরা সাবেক এমপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাবিব হাসানের নেতৃত্বে আজমপুরে ছিলাম। আন্দোলনকারীরা যখন আজমপুরের দিকে আসে তখন আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করি। তখন জামায়াত-শিবিরের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজলক্ষ্মীর একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রিকশা দিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে আজমপুর এলাকার ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উত্তরার আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতিকৃত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এবং নিজের সম্পদ বিক্রি করে রাজনীতি করে যাওয়া নেতাকে হত্যাকারীদের কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) কমান্ডার মো. নাজমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তখন তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। তখন আমরা মৃত ঘোষণা করলে স্বজনেরা তাঁকে নিয়ে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এর মধ্যে একজন রাবার বুলেটে আহত হয়েছিল। বাকিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিল। আহতদের মধ্যে ছাত্র, পথচারী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীও ছিল।’
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৩ জন আহত অবস্থায় আসেন। এর মধ্যে ১২ জন গুলিবিদ্ধ এবং একজন জখম। মাথায় গুলিবিদ্ধ একজনকে নিউরো সায়েন্সে হাসপাতালে পাঠানো হলে তাঁর মৃত্যু হয়। এছাড়া একজনের কিডনির এক পাশে গুলি লেগে আরেকদিকে বেরিয়ে যায়। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দুপুর পর্যন্ত ১০-১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
অপরদিকে উত্তরার আরএমসি হাসপাতালের সিআরও মো. আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অন্তত ১৫-২০ জনকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।’
এদিকে বিএনএস সেন্টারের সামনের এলাকায় সংবাদ সংগ্রহকালে আন্দোলনকারীদের হামলার শিকার হন এটিএন নিউজের রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ ও ক্যামেরাম্যান মারুফ আল মুকিত।
সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের কিছু ছেলেপেলে আমাদের বলছিল ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আমাদেরকে গুলি করছে। আপনারা কিছু বলেন না কেন, কিছু করেন না কেন? তখনই ভূয়া ভূয়া বলে আমাদের ওপর লোহার রড, লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। তখন আবার আন্দোলনকারীদের কিছু এসে আমাদেরকে রক্ষা করে এক সাইড করে দেয়।’
আন্দোলনরত আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা হাইস্কুল, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আজমপুর রেলগেট এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিস্তল, শর্টগান, চাপাতি, চাকু, ছুরি, লোহার রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাঁদের করা গুলিতে আমাদের তিন চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষার্থী, পথচারী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আহত হয়ে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যেতে দেখা যায়।
এদিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার থামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের থানা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছি। ছাত্ররা তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ওপর, আমাদের থানা, গাড়ির ওপর হামলা না হলে আমরা কোনো অ্যাকশনে যাবো না।’
গুলির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা পুলিশ কোনো গুলি ছুড়িনি। গুলিতো দূরের কথা টিয়ারশেল, সাইন্ড গ্রেনেডও মারা হয়নি।’
ওসি শাহ আলম বলেন, ‘আমরা আন্দোলরত ছাত্রদের ওপর কোনো অ্যাকশনে যাওয়াতো দূরের কথা, তাঁদের সঙ্গে কোনো উচ্চবাচ্যও করিনি। তাঁরা তাঁদের মতো আন্দোলন করছে।’
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে আজ রোববার সহিংসতায় রাজধানী ঢাকায় ১১ জন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মোট সাতটি মরদেহ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি মরদেহ নথিভুক্ত করা হয় এবং তিনটি মরদেহ নথিভুক্তর আগেই বিক্ষোভকারীরা নিয়ে চলে যান।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, চারটি মরদেহ নথিভুক্ত করা হয়েছে। আহত ২৩৪ জন চিকিৎসা নিতে আসেন, এর মধ্যে ৬৭ জন ভর্তি রয়েছে।
ঢামেকে নথিভুক্ত চারজনের তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন—জিগাতলায় গুলিবিদ্ধ আব্দুল্লাহ সিদ্দিকি (২২) ও অজ্ঞাত (১৮), ফার্মগেটে গুলিবিদ্ধ তাহেদুল ইসলাম (২২) এবং কারওয়ান বাজারে গুলিবিদ্ধ রমিজুদ্দিন রওফ (২৪)। এছাড়া বাকি তিন জনের নাম জানা যায়নি। তাঁদের বয়স আনুমানিক ১৪ থেকে ২৫ এর মধ্যে। তাঁরা সকলেই রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হন।
এদিকে রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাবিব হাসানের চাচাতো ভাই ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিয়ার মো. আনোয়ারুল ইসলাম (৬২)-সহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন—উত্তরা ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম, দক্ষিণখানের ৪৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সাত্তার এবং অজ্ঞাত দুই যুবক।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার রাজলক্ষ্মী থেকে বিএনএস সেন্টার পর্যন্ত সড়কজুড়ে বেলা ১১টার দিকে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরার আজমপুরে পুলিশের পাশ থেকে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাত্রদের বাধা দিলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ গুলি ছুড়তেও দেখা যায়। পরে আন্দোলনকারীরা তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর পরই উত্তরার আজমপুরের রাজউক কর্মাশিয়াল কমপ্লেক্সের নিচে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আজমপুরের রাজউক কর্মাশিয়াল মার্কেটের নিচ তলার ঢাকা মেডিসিন কর্ণারের নিচে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিহত হয়ে রাস্তায় এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেখানে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করে বলেন, ‘আজমপুরে আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। সেখানে আমাদের দুই ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায়। পরে দুজনের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আরেকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
নিহতের বিষয়ে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত গোয়েন্দা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গুলি করে। তাঁদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরাও রয়েছে। গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছে।’
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দাবি, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে থাকা জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম নিহত হন।’
তাঁরা বলেন, ‘হামলার পর আমাদের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে গাড়িতে করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম তোফাজ্জল হোসেন। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণখানের ৪৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সাত্তার। চলে যাওয়ার সময় দুপুর দেড়টার দিকে বিএনএস সেন্টার এলাকায় ছাত্রদের সঙ্গে থাকা জামায়াত-শিবিরের লোকজন হামলা চালায়। হামলায় তোফাজ্জল হোসেন আহত হলেও মারা গেছে তাঁর সঙ্গে থাকা আব্দুস সাত্তার।’
নিহত ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলামের ছোট ভাই ও উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন আল সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইঞ্জিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়ের হাত-পায়ের রগ ও কান কেটে দিয়েছে জামায়াত-শিবিরের লোকজন। এছাড়াও তাঁর বুকের ডান পাশে দুটি গুলি করে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেড়টার দিকে বিএনএস সেন্টার এলাকায় দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম তোফাজ্জল হোসেনের ওপর হামলা করে দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় তিনি আহত হন এবং তাঁর সঙ্গে থাকা দক্ষিণখানের ৪৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সাত্তার নিহত হন।’
আলাউদ্দিন আল সোহেল বলেন, ‘আমরা সাবেক এমপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাবিব হাসানের নেতৃত্বে আজমপুরে ছিলাম। আন্দোলনকারীরা যখন আজমপুরের দিকে আসে তখন আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করি। তখন জামায়াত-শিবিরের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজলক্ষ্মীর একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রিকশা দিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে আজমপুর এলাকার ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উত্তরার আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতিকৃত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এবং নিজের সম্পদ বিক্রি করে রাজনীতি করে যাওয়া নেতাকে হত্যাকারীদের কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) কমান্ডার মো. নাজমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তখন তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। তখন আমরা মৃত ঘোষণা করলে স্বজনেরা তাঁকে নিয়ে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এর মধ্যে একজন রাবার বুলেটে আহত হয়েছিল। বাকিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিল। আহতদের মধ্যে ছাত্র, পথচারী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীও ছিল।’
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৩ জন আহত অবস্থায় আসেন। এর মধ্যে ১২ জন গুলিবিদ্ধ এবং একজন জখম। মাথায় গুলিবিদ্ধ একজনকে নিউরো সায়েন্সে হাসপাতালে পাঠানো হলে তাঁর মৃত্যু হয়। এছাড়া একজনের কিডনির এক পাশে গুলি লেগে আরেকদিকে বেরিয়ে যায়। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দুপুর পর্যন্ত ১০-১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
অপরদিকে উত্তরার আরএমসি হাসপাতালের সিআরও মো. আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অন্তত ১৫-২০ জনকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।’
এদিকে বিএনএস সেন্টারের সামনের এলাকায় সংবাদ সংগ্রহকালে আন্দোলনকারীদের হামলার শিকার হন এটিএন নিউজের রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ ও ক্যামেরাম্যান মারুফ আল মুকিত।
সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের কিছু ছেলেপেলে আমাদের বলছিল ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আমাদেরকে গুলি করছে। আপনারা কিছু বলেন না কেন, কিছু করেন না কেন? তখনই ভূয়া ভূয়া বলে আমাদের ওপর লোহার রড, লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। তখন আবার আন্দোলনকারীদের কিছু এসে আমাদেরকে রক্ষা করে এক সাইড করে দেয়।’
আন্দোলনরত আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা হাইস্কুল, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আজমপুর রেলগেট এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিস্তল, শর্টগান, চাপাতি, চাকু, ছুরি, লোহার রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাঁদের করা গুলিতে আমাদের তিন চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষার্থী, পথচারী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আহত হয়ে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যেতে দেখা যায়।
এদিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার থামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের থানা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছি। ছাত্ররা তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ওপর, আমাদের থানা, গাড়ির ওপর হামলা না হলে আমরা কোনো অ্যাকশনে যাবো না।’
গুলির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা পুলিশ কোনো গুলি ছুড়িনি। গুলিতো দূরের কথা টিয়ারশেল, সাইন্ড গ্রেনেডও মারা হয়নি।’
ওসি শাহ আলম বলেন, ‘আমরা আন্দোলরত ছাত্রদের ওপর কোনো অ্যাকশনে যাওয়াতো দূরের কথা, তাঁদের সঙ্গে কোনো উচ্চবাচ্যও করিনি। তাঁরা তাঁদের মতো আন্দোলন করছে।’
মানিকগঞ্জে মাদক মামলায় দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে এই রায় দেন মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক লিয়াকত আলী মোল্লা। রায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৬ মিনিট আগেনড়াইলে মাদক মামলায় তাসলিমা বেগম (৫০) নামের এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. সাইফুল আলম এ দণ্ডাদেশ দেন। রায়ে একই সঙ্গে তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
২৮ মিনিট আগেচট্টগ্রামে এস আলম সংশ্লিষ্ট তিন ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ রোববার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল বিঘ্ন ও পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
১ ঘণ্টা আগেবান্দরবানের রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) ৩ সদস্য নিহত হয়েছে। আজ রোববার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আইএসপিআর জানায়, বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার গহিন জঙ্গলে সেনাবাহিনী কর্তৃক কেএনএ-এর গোপন আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়
১ ঘণ্টা আগে