ভাড়াটিয়া পরিচয়ে বাসায় ঢুকে স্বর্ণালংকার লুট করেন তাঁরা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ভাড়াটিয়ার বেসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের বাসায় ঢোকে একটি চক্র। সেই বাসার নারীদের থেকে অভিনব কায়দায় লুটে নেয় স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী। এই চক্রের মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

আজ মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

গ্রেপ্তাররা হলেন—মো. আলী হাসান সোহেল (৫৫) ও মোছা. সালমা (৫৩)। গতকাল নরসিংদী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ৩০ এপ্রিল খুলনার বানরগাতী এলাকার একটি বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়া বেসে বাড়ির মালিকের স্ত্রীর কাছে থেকে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় চক্রটি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

তিনি আরও জানান, এ ছাড়া কুমিল্লা, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একই কায়দায় স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার র‍্যাবের গোয়েন্দারা নরসিংদীর সদর থানার বাসাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

ঘটনার বর্ণনায় র‍্যাব কর্মকর্তা আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগীর স্বামী আব্দুর রহমানের খুলনার বানরগাতী এলাকায় পঞ্চমতলা একটি বাড়ি রয়েছে। বাড়ির একটি রুম ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেখে গত ২৮ এপ্রিল স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজন এসে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলেন। তারপর আলী হাসান সোহেল বাসা ভাড়া চূড়ান্ত করে অগ্রিম ভাড়া বাবদ ২ হাজার টাকা দিয়ে চলে যান। ঘটনার দিন সকালে আলী হাসান সোহেল তাঁর সহযোগী সালমাকে নিয়ে ভুক্তভোগীর ভবনের তৃতীয় তলায় আসেন। এ সময় তাদের হাতে প্লাস্টিকের বালতিতে কিছু মাছ ও টুল ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িতে এসে তাঁরা ভুক্তভোগীকে জড়িয়ে ধরে আন্তরিকতার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করতে থাকেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর স্বামী রুমের ভেতরে ঢুকে গেলে সোহেলের কথিত স্ত্রী কৌশলে ভুক্তভোগীকে পঞ্চম তলার একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর গলায় ও হাতে থাকা স্বর্ণালংকার পরিষ্কার করে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তা খুলে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।’

একই কৌশলে তারা খুলনার খালিশপুর, দৌলতপুরেও লুট করে বলে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান।

এই চক্রে সাত থেকে আটজন সদস্য আছে। আলী হাসান ও তাঁর মামি ৩-৪ বছর ধরে অভিনব কায়দায় মানুষের কাছে থেকে স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে আসছে। এমন প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

যেভাবে প্রতারণা করে চক্রটি

প্রতারকেরা রিঠা ফল ভেজানো ফেনাযুক্ত পানিতে একটি মোম গলানো দলা রাখেন, যা ফেনার কারণে ভুক্তভোগীরা দেখতে পান না। পরবর্তীতে একই রকম একটি মোমের দলার মধ্যে ভুক্তভোগীদের স্বর্ণালংকারগুলো ঢুকিয়ে পরিষ্কারের কথা বলে ওই বালতিতে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর বালতি থেকে আগের লুকিয়ে রাখা মোমের ফাঁকা দলাটি বের করেন। পরে সেটি একটি বাটিতে রেখে, ঢাকনা লাগিয়ে ভুক্তভোগীদের ফ্রিজে রাখতে বলেন। সঙ্গে তারা এ কথাও বলে দেন যে, আধা ঘণ্টার আগে এই বাটি খোলা যাবে না, কেননা এর ভেতরে অ্যাসিড পানি আছে। পরবর্তীতে তাঁরা অ্যাসিড মিশ্রিত ওই বালতির পানি বাইরে ফেলে দেওয়ার নাম করে, স্বর্ণালংকার ঢোকানো মোমের দলাসহ ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত