Ajker Patrika

শ্রীপুরে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের একপক্ষের আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া, গুলি ও গাড়ি ভাঙচুর

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১৬: ৪৪
শ্রীপুরে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের একপক্ষের আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া, গুলি ও গাড়ি ভাঙচুর

গাজীপুরের শ্রীপুরে মধ্যরাতে মোটরসাইকেল বহরসহ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তার প্রশিকা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটায়। 

এ সময় ওই সড়কে চলাচলকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মাওনা-ফুলবাড়িয়া সড়কে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির মোড়ল শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম মোড়লের ছেলে।

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়াসিসিটিভি ফুটেছে দেখা গেছে, লাল গেঞ্জি পরা সিহাব (জেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী) একজনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে এলোপাতাড়ি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর রাস্তার পাশে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। গাড়ির একপাশে বসে পড়েন যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জন। এর পরপরই লাল গেঞ্জি পরা সিহাব হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে গাড়িতে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। 

মো. আজিজুর রহমান জন শ্রীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মাহবুবর রহমানের ছেলে। তিনি গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাওনা মাহবুব কার সেন্টারের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, রাত পৌনে ১২টার দিকে শোরুম বন্ধ করে বাসায় রওনা হই। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়ল কয়েকজন নেতা-কর্মীসহ এসে বলেন, ‘আজিজুর রহমান জন ভাই নাকি তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এ জন্য তিনি হুমকি দিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পর অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। তাতে কার সেন্টারের কেয়ারটেকার আল আমিন ও মঈনুল ব্যাপারী আহত হয়। পরে জন ভাইকে লক্ষ করে অন্তত ১৫টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এ সময় জন ভাই গাড়ির নিচে বসে পড়ে প্রাণে রক্ষা পান। এ সময় অস্ত্রধারীরা তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে।’

ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান জন বলেন, ‘রাত পৌনে ১২টার দিকে আমার গাড়ির শোরুমের পাশে হাঁটাহাঁটি করছিলাম। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়ল এসে আমাকে হুমকি দিয়ে চলে যায়। আমি নাকি তার গাড়ি ভাঙচুর করেছি। ১০ মিনিট পর নাসির মোড়লের কর্মীরা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় আমি গাড়ির একপাশে নুইয়ে পড়ে প্রাণে বেঁচে যাই। তারা আমার তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। মাদক কারবারিদের বাধা দেওয়ায় তারা আমার গাড়ি ভাঙচুর করেছে।’

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ভাঙচুর করা গাড়ি। ছবি: সংগৃহীতআজ বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে নাছির মোড়লের গাড়িও ভাঙচুর করা অবস্থায় পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজিজুর রহমান জন বলেন, ‘আমার গাড়ি ভাঙচুর করে যাওয়ার পর নাছির নিজেই তার গাড়ি ভেঙে নাটক সাজিয়েছে।’

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাছির মোড়ল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘যুবলীগ নেতা জন ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। তাঁর লোকজন আমার গাড়ি ভাঙচুর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। এরপর আমি চলে আসি। আজিজুর রহমান একজন মাদকাসক্ত, তাঁকে এ বিষয়ে বাধা দিলে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর লোকজন দিয়ে আমার গাড়ি ভাঙচুর করে। কে বা কারা তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেছে আমি বলতে পারব না। ঘটনার পর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জন লাইভে এসে ছাত্রলীগের ওপর দোষ চাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে নাসির মোড়ল বলেন, সেটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম আজকের পত্রিকাকে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। গোলাগুলির সঙ্গে কারা জড়িত, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত