সাভারে কারখানা দখলের অভিযোগ, হামলায় সাংবাদিক আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ২২: ১৯

ঢাকার সাভারে বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস লিমিটেড নামের একটি কারখানা দখল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলের তথ্য সংগ্রহ হরতে গিয়ে স্থানীয় একজন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। আজ রোববার সকালে সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুর মহল্লায় ঘটনা ঘটে। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কারখানার এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিদিনের মতো আজ রোববার সকাল আটটা থেকে কারখানায় কাজ শুরু হয়। কাজ চলমান থাকা অবস্থায় সকাল নয়টার দিকে দেড় শতাধিক বহিরাগত প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে কারখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। কারখানার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রথমে তাঁরা সিসিটিভি ক্যামেরা ও কম্পিউটার ভেঙে ফেলেন। এরপর তাঁরা নিরাপত্তাকর্মীদের কারখানা থেকে বেড় করে দিয়ে ফটকে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় দ্য ডেইলি স্টার ও নাগরিক টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি আকাশ মাহমুদ ছবি তুলতে গেলে হামলাকারীরা তাঁকে মারধর করেন। 

মূল ফটকের দায়িত্বে থাকা একজন নিরাপত্তা কর্মী বলেন, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক মিনিটের মধ্যে কারখানাটি দখল হয়ে যায়।’ 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক আবদুর রহমান বলেন, ‘দেখলাম কিছু লোক দেশীয় অন্ত্র মস্ত্র নিয়া আইলো। তারপর তারা কারখানার ভিতরে ঢুইকা গেল।’ 

কারখানাটির দখলচ্যুত হওয়া পরিচালক অভিজিৎ রায় বলেন, ‘১৯৮৬ সালে কারখানাটি চালু হয়। রাশেদ মাসুদ খানসহ কয়েকজন কারখানাটির মালিক ছিলেন। তাঁরা ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ২০০৭ সালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে আমার বাবা বিশ্বজিৎ রায় রাজধানীর রমনায় অগ্রণী ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজারটি মালিকানা শেয়ারের মধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার মালিকানা শেয়ার ক্রয় করে মালিক হন। কারখানাটির পরিচালনা পরিষদ আমার বাবাকে ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব দেন।’ 

আহত সাংবাদিক আকাশ মাহমুদ। ছবি: আজকের পত্রিকা অভিজিৎ রায় আরও বলেন, ‘বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস একটি রুগ্ণ শিল্প কারখানা। শেয়ার কেনার পর থেকে আমরা কোনো রকমে এটি চালাচ্ছিলাম। কিন্তু কয়েক মাস ধরে আগের মালিকের স্বজনেরা এটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ জন্য নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যাতে নতুন কেউ কারখানার দখল নিতে না পারে। বিষয়টি সাভার থানাকেও জানানো হয়েছে। এরপরেও শেষ রক্ষা হলো না’ 

অভিজিৎ রায় বলেন, ‘আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে বহিরাগতরা যখন কারখানায় হামলা চালায় তখন সাভার থানাসহ জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভাগ্যিস আমরা ওই সময় কারখানায় ছিলাম না। তা হলেতো আমাদেরও মেরে ফলতে পারত।’ 

বর্তমানে কারখানাটি দখলের অভিযুক্ত পক্ষের মশিউর রহমান নামের এক কর্মকর্তার কাছে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারখানা দখল হয়নি। কোনো সাংবাদিককেও মারধর করা হয়নি।’ 

সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান বলেন, ‘আজ বেঙ্গল ফাইন সিরামিকের ভেতরে একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ থেকে কল পেয়ে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। তবে কারখানা দখল হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

ওসি শাহ্ জামান আরও বলেন, ‘দখলের খবর পেয়ে আমরা কারখানায় গিয়ে যাদের পেয়েছি তাঁরা মুখ খোলেননি। তাই কারা আগের মালিক আর কারা দখলদার তা বোঝা যাচ্ছে না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত