আশুলিয়ায় সড়ক আটকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ১৩ কিলোমিটার যানজট

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ১৩
Thumbnail image

পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভের জেরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাওনা পুরোপুরি পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল সোমবার সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। এতে সড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গতকাল কয়েক দফা তাঁদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ পরিবহন এই পথ ব্যবহার করায় এগুলোর যাত্রীরাও বিপাকে পড়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় শ্রমিকদের সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে সড়কের নবীনগর থেকে বাইপাইল হয়ে কবিরপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে চন্দ্রামুখী সড়কে নবীনগর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং ঢাকামুখী লেনে কবিরপুর থেকে বাইপাইল ১০ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। 

মহাসড়কের বাইপাইল পয়েন্টেই উভয় লেনে গতকাল সকাল ৯টা থেকে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শ্রমিকেরা। গতকাল গভীর রাতে বৃষ্টিতে ভিজেও সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন তারা। গতকাল ভিন্ন পথে গাড়ি চললেও আজকে সকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে করে এই পথে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে জনসাধারণকে। এতে নবীনগর ত্রিমোড়কে কেন্দ্র করে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশাপাশি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও জটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচামুখী সড়কে নবীনগর থেকে সাভারের দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ও ঢাকামুখী সড়কে নবীনগর থেকে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। 

জানা যায়, বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানা বার্ডস আর এনআর ফ্যাশন্স লিমিটেড, বার্ডস গার্মেন্টস, বার্ডস ফেডরেক্স, বার্ডস অ্যান্ড জেড লিমিটেড পাওনা পরিশোধ না করে বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর এসব কারখানার প্রায় ২ হাজার বিক্ষুব্ধ শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন। 

বার্ডস গ্রুপের কারখানাগুলো বাইপাইল বুড়ির বাজার এলাকায় অবস্থিত। এই কারখানাগুলো গত ২৮ আগস্ট থেকে লে-অফ ঘোষণা করা হয়। পরে শ্রমিকেরা লে অফে থাকতে রাজি না হলে পরে কারখানা ১২৪ (ক) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এখন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সোমবার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কথা ছিল। তবে শ্রমিকেরা সকালে কারখানার সামনে এসে দেখেন, কারখানান ফটকে পাওনা পরিশোধের সময়সীমা তিন মাস বৃদ্ধিসংক্রান্ত নোটিশ লাগিয়ে রেখেছে মালিকপক্ষ। রোববার এই নোটিশ জারি করে বার্ডস গ্রুপ। 

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বার্ডস গ্রুপের শ্রমিক বাবু বলেন, ‘আমাদের ৩০ সেপ্টেম্বর সমস্ত পাওনা পরিশোধ করার কথা ছিল। এর মধ্যে তিন মাসের সময় নিয়ে তারা নোটিশ টানিয়ে দেয় যে, পাওনা তিন মাস পর পরিশোধ করা হবে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কীভাবে মালিকপক্ষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়? শ্রমিকদের বেতন বাকি নেই, কিছু কর্মকর্তার বেতন বাকি থাকতে পারে। হঠাৎ করে রানিং ফ্যাক্টরি লে-অফের নোটিশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। এক বছর ওপরে যাদের চাকরির বয়স, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যাদের চাকরির বয়স এক বছরের কম, তাদের কি কোনো ক্ষতি হয়নি?’পাওনা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানার শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকাবার্ডস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল শাহরিয়ার সাদাত আনোয়ার স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘শ্রমিক-কর্মচারীদের আগস্ট মাসের বেতন বাবদ পাওনা ১০ সেপ্টেম্বর এবং তাদের সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য টাকা ৩০ সেপ্টেম্বর পরিশোধের দিন ধার্য করা হয়। উল্লেখ্য যে, সমঝোতা মোতাবেক ১০ সেপ্টেম্বর আগস্ট মাসের বেতন বাবদ আমরা প্রায় ৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণ বাবদ পরিশোধ্য আনুমানিক আরও ২১ কোটি টাকা। আমাদের হাতে এই মুহূর্তে তহবিল না থাকায় বাধ্য হয়ে কারখানা বিক্রি করে পরিশোধের পরিকল্পনা করতে হয়েছে এবং সেই মোতাবেক চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আশুলিয়া এলাকায় তৈরি পোশাকশিল্পে প্রায় দুই মাস ধরে চলমান অস্থিরতা এবং সমগ্র দেশের সার্বিক অবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা বিবেচনায় এত অল্প সময়ে কারখানা বিক্রি করে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আপনাদের পাওনা সমঝোতা মোতাবেক ৩০/০৯/২০২৪ তারিখে কোনোভাবেই পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাওনা পরিশোধের জন্য ন্যূনতম আমাদের তিন মাস সময় প্রয়োজন। আমরা তিন মাসের যৌক্তিক সময় পেলে আশা করি কারখানা বিক্রি করে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আপনাদের সব পাওনা সুষ্ঠুভাবে পরিশোধ করে দিতে পারব।’

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘গতকাল থেকে বাইপাইলে একই অবস্থা। সড়কে যান চলাচল বন্ধ। কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। অ্যাকশনে গেলেও তো অন্য সমস্যা। আমরা কী করতে পারি?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত