রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটার সময় তাঁর মরদেহ সমাহিত করা হয়। তাঁর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রধান কার্যালয় বলাকার সামনে দুপুর ২টার সময় ক্যাপ্টেন নওশাদের জানাজা সম্পন্ন হয়। 

জানাজার সময় বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমানের এমডি ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালসহ বিমান ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্যাপ্টেনের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। 

এ সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, 'ক্যাপ্টেন নওশাদের মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত শোকাহত। এই পাইলট এর আগেও বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে তার সক্ষমতা দেখিয়ে যাত্রীদের নিরাপদে অবতরণ করিয়েছেন। জাতির এই সাহসী সন্তান আজ আমাদের মধ্যে নেই, এটা আমাদের জন্য অনেক বেদনার।' 

বিমান সূত্র জানিয়েছে, বিমানের বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-০২৬ ফ্লাইটে তাঁর মরদেহ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে যাত্রী নিয়ে দেশে ফেরার পথে বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এয়ারক্রাফট ভারতের নাগপুরে থামে। ওই ফ্লাইটে করে ক্যাপ্টেনের মরদেহ বাংলাদেশে আনা হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট দুপুরে মারা যান ক্যাপ্টেন নওশাদ। পরে তাঁর মরদেহ নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পাইলট নওশাদের মরদেহ সকালে উত্তরা পরিবারের কাছে নেওয়া হয়। পরে দুপুর দুইটার সময় বিমানবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের বলাকা ভবনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিকেলে সাড়ে তিনটায় বনানী কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। নওশাদের স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে রয়েছে। এর মধ্যে এক মেয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করলেও, ভিসা জটিলতায় তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরতে পারেননি। 

গত শুক্রবার মধ্য আকাশে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন বিজি-২২ ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুম। হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার পরও ফ্লাইটটিকে তিনি দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করাতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী ফ্লাইটটি জরুরি ভারতের নাগপুরে ড. বাবা সাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। সেখান থেকে দ্রুত তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা চলাকালে গত সোমবার তার মৃত্যু হয়। ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছিল। ক্যাপ্টেন নওশাদের বুদ্ধিমত্তায় সবার জীবন রক্ষা পায়। এর আগেও ক্যাপ্টেন নওশাদ তাঁর বুদ্ধি ও কৌশল প্রয়োগ করে ১৪৯ জন যাত্রী, দুই পাইলট আর সাত ক্রুর জীবন বাঁচিয়েছিলেন। 

বিমান সূত্রে জানা গেছে, নওশাদ ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটে ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলেন। তখন সেই ফ্লাইট মাসকাট বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা করেছিল। টেক-অফ করার পর মাসকাট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত বিমান এয়ারক্রাফটের। 

ক্যাপ্টেন নওশাদের সাহসিকতার জন্য ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠান।