অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন-সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। চলমান এই আন্দোলন চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও (জবি)। 

গত ২৬ মে পেনশন-সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের জন্য প্রথম মানববন্ধন করেন জবি শিক্ষকেরা। এরপর ২৮ মে ২ ঘণ্টা এবং ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এ সময় তাঁরা কোনো ক্লাস নেননি। পরবর্তী সময়ে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর ২৫, ২৬, ২৭ জুন ফের অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। আগামীকাল ৩০ জুলাই পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকেরা। তাঁদের দাবি না মানা হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এ সময় কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে। 

এদিকে এসবের কারণে ব্যাঘাত ঘটছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে। এতে করে শিক্ষার্থীরা সেশনজটের আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।  

স্নাতক শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ইসরাত আমিন বলেন, ‘শিক্ষকদের আমাদের কথাও ভাবা উচিত। করোনার কারণে ইতিমধ্যে আমরা পিছিয়ে গেছি। এখন শেষ বর্ষে এসে যদি আবার আটকা পড়ি, তাহলে তো চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ব। অনেক শিক্ষার্থী চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে, দেশের বাইরে যাবে অনেকে। এভাবে আন্দোলন দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে সবাই তো পিছিয়ে পড়বে প্রতিযোগিতামূলক জায়গাগুলো থেকে।’

স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘শিক্ষকদের এই আন্দোলন দীর্ঘদিন চললে আমরা তো সেশনজটে পড়ব। এতে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হব।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোভিডের সময় তো অনেক দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এরপর আমরা শিক্ষকেরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে, বন্ধের দিনও ক্লাস নিয়ে মেকআপ করে দিয়েছিলাম। এখনো আমাদের আন্দোলনের জন্য যে কয়দিন বন্ধ হবে, তা নিয়েও ব্যাকআপ প্ল্যান আছে। যাতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না হয় সেই ব্যবস্থা করব। এখন কোনো চিন্তা নাই, যখন আন্দোলন শেষ হবে, তখন রুটিনগুলো অ্যাডজাস্ট করে সেভাবে ব্যবস্থা নেব।’ 

মাশরিক হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন তো পরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্যই। শিক্ষার্থীদের একটা মুহূর্ত নষ্ট হোক এটা তো কোনো শিক্ষকই চায় না।’ 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়লে প্রথমত এর জন্য দায়ী থাকবে যারা এই বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম তৈরি করে এ রকম পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। আর সেশনজট হলেও শিক্ষার্থীরা তো আমাদের। করোনার সময়েও আমরা অনলাইন ক্লাস, স্পেশাল ক্লাস নিয়ে সে সময় রিকভারি করেছি। আমাদের দাবি পূরণ হলে আমরা তখন শুক্র, শনিবার স্পেশাল ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে নেব। এটা তো আর অনন্তকাল চলবে না, সমাধান তো হবেই। চিন্তার কিছু নেই।’

এদিকে ৩০ জুলাই শিক্ষকদের পাশাপাশি একই দাবিতে পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও। দাবি না মানলে পরে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। 

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই-পরবর্তী সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।  

এর আগে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তার আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সুপার গ্রেড কার্যকর এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি জানিয়েছে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই সংগঠন। ১ জুলাই থেকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।