২০০ বছর পর নবরূপে ‘ঢাকা গেট’ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৫২
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২১: ৫৭

জনশ্রুতি মতে, ৩৬৪ বছর আগে বাংলার সুবেদার মীর জুমলা একটি ফটক নির্মাণ করেন ঢাকার রমনা এলাকায়। সে সময় লোকমুখে এটি মীর জুমলা ফটক নামেই অধিক পরিচিতি পায়। কিন্তু ফটকটি ‘ঢাকা ফটক’ নামে নির্মাণ করা হয়েছিল। তার ১৬৪ বছর পর ১৮২৫ সালে কোম্পানি শাসন আমলে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডাওয়ে ফটকটি সংস্কার করেন। তারপরই এটি ‘ঢাকা গেট’ নামে সর্বাধিক পরিচিতি পায়।

এরও ২০০ বছরের মাথায় এসে ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি আরেক দফা সংস্কার শেষে ‘ঢাকা গেট’ নামেই এটি উদ্বোধন করা হলো। আরেক দফায় খুলল ঢাকার দুয়ার। বিষয়টি ঢাকাবাসী ও বাংলার মানুষের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বলে মনে করেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই যে ফটকটি আজকে ঠিক ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উদ্বোধন হলো। ১৮২৩ বা ’২৪ সালে এটার নির্মাণকাজ শুরুর সময়। যখন রমনা এলাকা পরিষ্কার করা হয়। এখন ২০২৪ সাল। ঠিক ২০০ বছর লাগল। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন।’

ব্রিটিশ শাসনামলের শেষদিকে ফটকটির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। দুই দিকের ছোট বুরুজগুলো এবং বুরুজের চূড়ার আমলা-কলসগুলো ভেঙে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসনামলে গভর্নর মোহাম্মদ আজম খানের সময়ে সড়কটি চওড়া করা হয়। সে সময় ফটকের পূর্ব অংশের বড় বুরুজটি নবনির্মিত সড়কদ্বীপে রেখে বাকি অংশ পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয় এবং নতুন সড়কের পূর্ব পাশে একটি অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করা হয়। তারপর সেটি আবার ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক ফটক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে ফটক ঘিরে তৈরি করা হয়েছে গণপরিসর। ফটকের পশ্চিমে স্থাপন করা হয়েছে মীর জুমলার আসাম অভিযানের একমাত্র সাক্ষী বিবি মরিয়ম কামান। পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় গেটটির মূল উপকরণ যেমন চুন, সুরকি ইত্যাদি ব্যবহার করে ডাওয়ের সময়ের এবং ১৯৬০-এর দশকের অংশগুলোকেও সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাশে রাখা হয়েছে কাচে ঘেরা একটি ছবিঘর। যেটি সাধারণ মানুষের উন্মুক্ত জাদুঘর হিসেবে রাখা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের সময় মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এই ঢাকা ফটকে শুধু দেশবাসী না, সারা বিশ্বের কাছে আমরা আবার তুলে ধরতে পারলাম, পুনর্জীবিত করতে পারলাম। এটা আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনিও উৎফুল্ল অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।

দেশের প্রখ্যাত স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ গেটটির নতুন নকশা তৈরি করেন। সেই নকশার আদলেই সংস্কার করা হয়। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। তবু এটি আমরা করতে পেরেছি। এটা সংস্কারের সময় আমরা নানা কাঠখড় পুড়িয়ে গ্রানাইট পাথরও ব্যবহার করেছি।’

গেটটি উদ্বোধনের সময় মোগল আমলের আবহ তৈরি করতে আনা হয়েছিল এক জোড়া হাতি। সেটার সঙ্গে হাতে বল্লমওয়ালা পাইক-পেয়াদাও আনা হয়েছিল; যা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা সাধারণ মানুষের আলাদা করে নজর কাড়ে। সংস্কারের পর ঢাকা গেটের নতুন রূপ দেখে ভালো লাগার কথা জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল শাওন ৷ তিনি বলেন, ‘সময়ের আবর্তে ধুলোর সঙ্গে মিশে যাওয়া একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন আবার নতুন করে স্থাপনের উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। যেহেতু এটি পাবলিক প্রোপার্টি, তাই আমাদের উচিত হবে এটি নষ্ট না করা ৷ পোস্টার লাগানো বা পানের পিক ফেলার স্থান না বানালে ঐতিহাসিক এই নিদর্শন তার পূর্ণ মর্যাদা পাবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত