রানি এলিজাবেথের আগমনের মধুর স্মৃতি আজও মনে করেন শ্রীপুরবাসী 

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমবেদনা জানাচ্ছে। রানির সঙ্গে থাকা স্মৃতি শেয়ার করছে। বাংলাদেশের একটি গ্রামে ১৯৮৩ সালের ১৬ নভেম্বর আগমন ঘটেছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। রানির মৃত্যুতে প্রায় চার দশক আগের সেই স্মৃতি মনে করছেন গাজীপুরের শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষ। 

শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা স্বনির্ভর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মো. মিজানুর রহমান খানের ছেলে মো. শাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। একটি আদর্শ গ্রাম দেখতে বৈরাগীরচালার মতো পল্লিতে এসেছিলেন রানি। সেদিন গ্রামের মানুষের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। পুকুরে মাছের লাফালাফি দেখে মুগ্ধ হন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।’ 

শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আগমন ছিল বাংলাদেশ জন্য উন্নয়নের একটি বার্তা। রানির কল্যাণে শ্রীপুরের নাম বিশ্ববাসী জানতে পারে। আমরা রানির স্মৃতি ভুলতে পারব না। রানির পদচারণায় শ্রীপুরে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। আমাদের মতো একটি অবহেলিত জনপদে এসে রানি আমাদেরকে আরও অনেক উপরে নিয়ে গেছেন। রানির প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। চিরকাল শ্রীপুরের মানুষ ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে মনে রাখবে।’ 

ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে শ্রীপুরে আসেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ছবি: সংগৃহীতরানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সঙ্গে থাকা শেখ রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. তপন মিয়া বলেন, ‘ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে বাবা পুরো সময়টা ছিলেন। বাংলাদেশ আর শ্রীপুর সম্পর্কে রানিকে সকল বিষয়ে ধারণা দিয়েছিলেন। বাবার কাছ থেকে শুনেছি বাংলাদেশ মানুষের বিশেষ করে বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষের পুকুর থেকে জাল দিয়ে মাছ শিকার, কৃষি উৎপাদন দেখে রানি আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন।’ 

সেদিন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রানির সঙ্গে ছিলেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক গাজীপুর জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ধিরাজ মালাকার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান খান ছিলেন। ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন রানি। শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বর্তমান পৌরসভার বৈরাগীরচালা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় লাল গালিচা বিছানো ছিল। দিনটি শ্রীপুরের মানুষের জন্য চিরস্মরণীয়। রানির আগমনের ৩৯ বছর পার হলেও এই জনপদের মানুষ মনে রেখেছে রানিকে। সেদিন রানির আগমনে শ্রীপুরসহ আশপাশের এলাকায় মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছিল এক উৎসব। আনন্দে আর উৎসবে মেতেছিল পুরো গ্রামের মানুষ। বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি সবই করেছিল গ্রামের নারীরা। 

বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রানির সঙ্গে ছিলেন। ছবি: সংগৃহীতশ্রীপুরের তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান খান গড়ে তুলেছিলেন এই আদর্শ গ্রাম। নিজ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মসজিদ, পোস্ট অফিস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গ্রামে ছিল হাঁস-মুরগির খামার, পশু প্রজনন কেন্দ্র, কৃষি সেচের জন্য গভীর নলকূপ ও বিদ্যুৎ সংযোগ। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গ্রামে ঘুরে ঘুরে দেখেছিলেন গ্রামের নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি নানা রকম পিঠাপুলি, মুড়ি ভাজার দৃশ্য। গরম-গরম মুড়ির স্বাদ নিয়েছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত