হেফাজতের নাশকতার ফুটেজ খুঁজে পাচ্ছে না সিআইডি-পিবিআই 

শাহরিয়ার হাসান
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৬: ১০
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৬: ২৯

ঢাকা: সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা শতাধিক মামলার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। তবে গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) তদন্তভার হস্তান্তর করেও যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এই সুযোগে আইনের ফাঁক গলে যাতে কোনো অপরাধী পার পেয়ে না যায় সেজন্য একযোগে কাজ করছে একাধিক বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা। কিন্তু এরপরও ফরেনসিক আলামত হিসেবে তাণ্ডবের কোনো ফুটেজ ও উস্কানিমূলক ওয়াজের ভিডিওর হদিস মিলছে না।

তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই বলছে, সহিংসতা সংশ্লিষ্ট ভিডিও–অডিও ক্লিপগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন সাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। তাণ্ডব কাভার করা সিসিটিভিগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকি হুজুরদের ওয়াজ মাহফিলে রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্যের ভিডিও–ও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যেখানেই যে ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে। ডাউনলোড করে আর্কাইভ করে রাখা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশজুড়ে সহিংসতা ও তাণ্ডবে কারা জড়িত এবং ঘটনার পেছনের মদতদাতাদের চিহ্নিত করতে ঘটনাস্থলের সেই ভিডিও এবং ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা বিশ্লেষণ করা হবে।

জানা যায়, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ঘটে যাওয়া তাণ্ডবের ২৩টি মামলা সিআইডি এবং ১৬ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই। তারা এরই মধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করেছে।

সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা ও তাণ্ডবে কারা জড়িত এবং ঘটনার পেছনের মদতদাতাদের চিহ্নিত করতে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সেগুলো পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তাদের কাছে যেগুলো ফুটেজ রয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করছি। ফুটেজগুলো ফরেনসিক করে সেখান থেকেই একটি দালিলিক প্রমাণ তৈরি করে আদালতে জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

সিআইডি প্রধান আরও বলেন, ফরেনসিক তদন্তে নাশকতার প্রমাণ পেলে অপরাধীদের সহজে ছাড়া পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। শাস্তিও হবে।

মামলার তদন্তের বিষয়ে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আমাদের হাতে আসা মামলার তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন তদন্তকারী দল। কিন্তু মামলা তদন্ত করতে নেমে আমরা প্রথম যে সমস্যাটি সম্মুখীন হচ্ছি তা হলো ভিডিও–অডিও ক্লিপগুলো নিয়ে। আপতত সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। হেফাজতের মামলায় স্বাভাবিক তদন্তের পাশাপাশি নাশকতার ঘটনার ফরেনসিক ও প্রযুক্তিগত প্রমাণ করতে চাই আমরাও। সেভাবেই আলামত সংগ্রহ হচ্ছে। 

মূলত নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ, জ্বালাও-পোড়াও, উস্কানিমূলক বক্তব্য, রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় হেফাজতকে নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। একের পর এক অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংগঠনের শীর্ষ ১৭ নেতাসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক কর্মীকে। যদিও তাদের সাত বছরের পুরনো মামলা থেকে শুরু করে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।   

থানা পুলিশ, ডিবির সঙ্গে হেফাজতের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার ও মামলা নিয়ে কাজ করছে র‍্যাব, সিআইডি, পিবিআই।

এ বিষয়ে র‍্যাব বলছে, হেফাজত ইসলামের ১২ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে দিয়েছেন তারা। আর এখন পর্যন্ত শতাধিক ফেসবুক পেজের সন্ধান মিলেছে। এসব ব্যবহার করে লাইভস্ট্রিম, ভিডিও ও রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হতো।  

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আজকের পত্রিকাকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের আইটি টিম নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে পুরনো ভিডিও লাইভ আকারে ছড়াতো। যারা এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করেছে তাদের র‍্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল শনাক্ত করেছে। তবে সেখান থেকে ভিডিওগুলো সরানো হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত