জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্যকে ই-মেইল করেছেন জাবি ছাত্রলীগ নেতা

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭: ০৯
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭: ৪৩

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্যকে ই-মেইল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ হাসান ইমন। আজ শুক্রবার সকালে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম ও তাঁর একান্ত সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাসকে ই-মেইল করেন ইমন।

জাবি শাখা ছাত্রলীগের উপতথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান ইমন। তিনি ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শেখ রাসেল হলের আবাসিক ছাত্র। 

ইমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান করা আমার জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ছাত্রজীবন শেষ করতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্যকে ই-মেইল করেছি। একই সঙ্গে আমার ওপর নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চেয়েছি।’ 

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে জীবনের নিরাপত্তা ও নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের শাস্তি চেয়ে আবেদন’ শীর্ষক অভিযোগপত্রে ইমন উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের ছোট ভাই আরমান খান যুব ইয়াবা সেবন করা অবস্থায় পিস্তল ঠেকিয়ে আমাকে মারধর করেছেন। সেই সঙ্গে আমার শরীরে মদ ঢেলে মাদকাসক্ত প্রমাণের চেষ্টা করেন।’ 

ইমনের দাবি, গত ১৩ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে তাঁকে আটকে প্রায় চার ঘণ্টা মারধর করা হয়। 

গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে ইমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের (৪১তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী আরমান খান যুব, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের (৪২তম ব্যাচ) আরাফাত, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের (৪৪তম ব্যাচ) তুষণ ও অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি ওই রাতে তাঁকে নির্যাতন করেন। তাঁদের সবার ছাত্রত্ব শেষ হলেও মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে তাঁরা নিয়মিত অবস্থান করেন। 

অভিযোগপত্রে ইমন তাঁকে মারধরের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ‘চারজন মিলে অত্যাচার চালিয়েছে রড, হাতুড়ি, হাত দিয়ে অনবরত। এরপর কাপড়ের ভেতর থেকে বের করা হলো পিস্তল। পেটে ঠেকানো হলো। ভয়ে কাঁপছিলাম, কারণ ইয়াবা সেবন মাত্রই করেই যুব ভাই পিস্তলটা বের করলেন ও ধরলেন। ভয় হলো মেরে দিতেও পারে। চোখ বন্ধ করলাম, গড়গড় করে পানি বেরিয়ে এল চোখ থেকে, বাবা-মায়ের কথা ভাবলাম। ভাইকে বললাম ভাই আর পারছি না, পেটে গুলি করলে না-ও মরতে পারি, মাথায় গুলি করেন। গুলি না করে পেটেই চাপ দিলেন নল দিয়ে। এদিকে মার থেমে নেই। মাথায় হাতুড়ি, রড দিয়ে শরীরে মার হচ্ছেই।’ 
 
ইমন অভিযোগপত্রে ঘটনা পরবর্তী সময়ের বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করেন, ‘পরদিন গোসল করে ফ্রেশ হলাম। গেলাম প্রক্টরের কাছে। উনি বাসায় ডাকলেন। বাসায় গিয়ে দেখি সোহেল ভাই (শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি) একান্তে বসে আছেন। প্রক্টর আমাকে নিভৃতে কথা বলার সুযোগ দেননি। সোহেল ভাইয়ের সামনে তিনি আমার সঙ্গে কথা অব্যাহত রাখেন। তিনি জানতে চান, “যুবর রুমে গেছিলা। কোন প্রবলেম?” বললাম, না। বাইরে অপেক্ষা করলাম। সোহেল ভাই বের হলে দাঁড় করিয়ে মারের দাগগুলো দেখিয়ে কাঁদলাম। বললাম, আপনাকে কখনো বলিনি আমি।’ 

প্রক্টরের প্রতি আস্থাহীনতার কথা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘১৩ আগস্টের ঘটনায় এত দিন পর আপনার কাছে আবেদন করছি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানানোর পরও তিনি আমাকে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেননি। উপরন্তু বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য তিনি পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে ঘটনার পরদিন প্রক্টর স্যারের বাসায় ছাত্রলীগ সভাপতির একান্তে বৈঠক, আমার কাছে প্রশাসনকে আস্থাহীন করে তোলে। প্রক্টরের ওপর আস্থা রাখতে না পারায় আপনার নিকট আবেদন জানাচ্ছি।’ 

ইমনের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মারধরের বিষয়টি ইমন আমাকে অবগত করেছিল। কিন্তু লিখিত অভিযোগ দেয়নি। সে নিজেই বলেছে, বিষয়টি সে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে চায়। সে আমাকে বলেছিলে, এ বিষয়ে সে নিজে থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে।’

অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের একান্ত সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অফিস বন্ধ থাকায় কী ই-মেইল এসেছে তা জানি না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত