সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়সহ ১১ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়সহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। দাবি আদায় না হলে রাজপথে অবস্থান নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা। 

আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে ‘সমতলের আদিবাসী ছাত্র-যুব ও সাধারণ জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত কালচারাল শোডাউন কর্মসূচিতে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। 

সমাবেশে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নামমাত্র একজন পাহাড়ের আদিবাসীদের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে অপরদিকে সমতলের আদিবাসীদের জন্য কোনো প্রতিনিধিই রাখা হয়নি। আদিবাসী ফোরামের তথ্যমতে ৪০ লাখ আদিবাসী এ দেশে রয়েছে যার দুই তৃতীয়াংশ সমতলের। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব আন্দোলনে আদিবাসীদের ভূমিকা থাকলেও স্বাধীনতার অর্ধদশক পেরিয়ে গেলেও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।’ 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংলাপে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কাউকে ডাকা হয়নি জানিয়ে অলিক মৃ বলেন, ‘আমরাও অংশগ্রহণ করতে চাই, আমরাও আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। আমাদের একজন প্রতিনিধি রাখেন যে আমাদের হয়ে কথা বলবে। এখনো সময় আছে আমাদের সঙ্গে কথা বলার। আমাদের দাবি আদায় না হলে আমরাও এই মাঠ ছাড়ব না, রাজপথ ছাড়ব না।’ 

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন লেখক গবেষক পাভেল পার্থ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক নিরলা মার্ডি, শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য অলিউর সানসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। 

বক্তারা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবেন তারা। এছাড়া আগামী শুক্রবার সংহতি সমাবেশের ঘোষণা দেন তাঁরা। 

সমাবেশে উপস্থাপিত ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—সমতলে আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সমতলের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সংবিধানে আদিবাসীদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনায় আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করা, সমতলের আদিবাসীদের শিক্ষা স্বাস্থ্য, আর্থসামাজিক ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে বিশেষ ব্যবস্থা (মনিটরিং সেল অথবা বোর্ড গঠন) করতে হবে, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় আদিবাসী অধ্যুষিত জায়গায় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান করা, উন্নয়নের নামে ভূমি অধিগ্রহণ, বেদখল ও উচ্ছেদ বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সকল আদিবাসী হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, সমতলে আদিবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতসহ আদিবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও ১৯২৭ সালের বন আইন সংশোধন করা। 

আদিবাসী ফোরামের সদস্য উজ্জ্বল আজিম বলেন, আদিবাসীদের প্রধান সমস্যা ভূমি। এ জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। 

শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য অলিউর সান বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসীরা তাদের দেয়ালে করা গ্রাফিতি মুছে দেওয়ার প্রতিবাদ করছেন। রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। এই সময় আমার মনে হয় সিধু কানুর ভাস্কর্য ভেঙে দিলেও, কল্পনা চাকমাকে মুছে দিতে চাইলেও তারা বেঁচে থাকবে সবার মনে। তাদেরকে মনে রেখে এগিয়ে যাবে আদিবাসীরা।’ 

সাঁওতালদের নেতা জন হেমব্রম বলেন, ‘সাঁওতালিদের ৩৫টি সুর আছে। দসাই নাচ আছে যা প্রতিবাদের কথা বলে। আমরা যুগ যুগ ধরে প্রতিবাদ করে এসেছি। আমাদের সাঁওতালে প্রাথমিকের শিক্ষা বই এখনো মাতৃভাষায় হয়নি। সরকারকে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।’ 

বক্তব্য শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গানের দল মাদল, এফ মাইনর, গারো কালচারাল একাডেমি, গ্রীমা সান কালচারাল একাডেমিসহ আদিবাসীদের বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের গান ও নাচের মধ্য সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত