সাভারে ইয়ামিন হত্যা: পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফী ফের ৫ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২: ১৩
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২: ৪৮

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে ঢাকার সাভারে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সদ্য বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপার নিউমারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহিল কাফীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুলহাস উদ্দিন এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিচারক আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার মধ্যে কাফীকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। 

সকালে কাফীকে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় দায়ের করা প্রকৌশলী আরিফ মইনুদ্দিনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় আট দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

অন্যদিকে, সাভার থানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার পরিদর্শক মো. আব্দুল্লাহ বিশ্বাস রিমান্ডের এই আবেদন করেন। রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন এক আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে বিএনপির আইনজীবী নেতা ওমর ফারুক ফারুকী ও শামসুজ্জামান দীপু রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

শিক্ষার্থী ইয়ামিন হত্যা মামলাটি ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে গত ২৫ আগস্ট দায়ের করেন নিহতের মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সাভার থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে সাভার থানা মামলাটি রুজু করে। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, নিহত শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন এমআইএসটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে সাভার বাজার বাস স্ট্যান্ডে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। তাঁরা শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বুকের বাঁ পাশে গুলি করেন। গুলিতে ইয়ামিনের বুকের বাঁ পাশে অসংখ্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। এমতাবস্থায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইয়ামিনকে টেনে সাঁজোয়া যানের ওপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য গাড়িটি এপাশ থেকে ওপাশ প্রদক্ষিণ করতে থাকে। ইয়ামিনকে প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেয় এবং সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে বের করে তাঁর পায়ে পুনরায় গুলির নির্দেশ দেয়। ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে পায়ে গুলি না করে রাস্তার ওপরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেয়। গুলিবিদ্ধ শাইখ ইয়ামিনকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচণ্ড কষ্টে নিশ্বাস নিতে তখনো দেখা যায়। পুলিশ সদস্যরা ধরাধরি করে উঁচু রোড ডিভাইডারের একপাশ থেকে আরেক পাশ ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে তাঁকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুর রহমানসহ ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। 

উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহিল কাফীকে গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর হাজারিবাগ থানায় দায়ের করা অপহরণ মামলায় আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর গত ৯ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 

রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আব্দুল্লাহিল কাফী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন, হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্তকরণ ও এ ঘটনার ইন্ধনদাতাদের শনাক্তকরণের জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত