Ajker Patrika

ভূমি অফিস সহায়কের প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ২২: ০১
ভূমি অফিস সহায়কের প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক আব্দুল কাদির মিয়ার বিরুদ্ধে খাজনা খারিজ করে দেওয়ার জন্য ঘুষের টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা নেওয়ার সময় গোপনে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যা নিয়ে আলোচনা চলছে স্থানীয়দের মধ্যে। 

তবে অফিস সহায়ক আব্দুল কাদির মিয়া ঘুষের টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। 

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আব্দুল কাদির মিয়া তাঁর দপ্তরে বসে প্রকাশ্যে সেবা নিতে আসা ভোলা মিয়ার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা গুনে নিচ্ছেন। ভোলা মিয়া বলছেন, ‘সব খারিজ সমান নয়। গরিব মানুষ কাজটা করে দিয়ে দেন।’ প্রত্যুত্তরে আব্দুল কাদির বলেন, ‘কথা ছিল ছয় হাজার টাকা দিবেন। কম দিতে পারবেন না। প্রয়োজনে পরে হলেও দিতে হবে। একটা কাজ করে কিছু টাকা পাওয়া না গেলে চলে না।’ এরপর টাকাগুলো গুনে পকেটে ভরেন আব্দুল কাদির। চলে যাওয়ার সময় ভোলা মিয়া আবারও বলেন, ‘আপনি আরও এক হাজার টাকার আবদার করেছেন, একটা বিহিত (ব্যবস্থা) হবে। আপনি কাজটা করে রাখেন।’ 

আব্দুল কাদির মিয়া সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ কচুরি গ্রামের বাসিন্দা। সরেজমিন তাঁর এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি যে বাসায় বসবাস করেন সেটি তাঁর স্ত্রীর ভাইদের দেওয়া সম্পত্তি। ওই সম্পত্তিতে একটি হাফ বিল্ডিং বাসা করে কাদির মিয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। 

স্থানীয়রা বলছেন, বিলাসবহুল জীবনযাপন কাদির মিয়া করেন না। তবে তাঁর সন্তানদের তিনি ঢাকায় পড়াশোনা করাচ্ছেন। তবে ঢাকায় তাঁর বাড়ি রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তারা। 

সরেজমিন মাইজখাপন ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, সরকারি ফি দিয়েও সেবাগ্রহীতাদের আব্দুল কাদিরকে বাড়তি টাকা দিতে হয়। তা না হলে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকে ভূমি অফিসে। আবার কেউ বলছেন, সেবা নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। 

ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্র জানা যায়, এই অফিসে মাসে সর্বোচ্চ ১৫-২০টি খাজনা খারিজ হয়ে থাকে। ঘটনাটি আনুমানিক পাঁচ মাস আগের। মাইজখাপন ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দারাই খাজনা খারিজ করতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, তা বোঝেন না। তাই তাঁরা সহযোগিতা চান। সহযোগিতা করতে না চাইলেও তাঁদের পীড়াপীড়িতে অনেক সময় প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সহযোগিতা করতে হয়। 

এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম ও ফুল মিয়া নামের দুজন ভুক্তভোগী জানান, যে জায়গা খারিজ করতে তিন হাজার টাকা লাগে, সেখানে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া ২৪ শতাংশ জমির খারিজের জন্য ২৩ হাজার টাকা চেয়েছেন কাদির। পরে খারিজ না করে চলে যান তাঁরা। 

অন্যদিকে মাইজখাপন ইউনিয়নের চন্দ্রাবতী মন্দিরের পুরোহিত অর্জুন চক্রবর্তী ও মাইজখাপন ইউনিয়নের নীলগঞ্জ বাজারের মিষ্টির ব্যবসায়ী মো. হারিছ মিয়া জানান, তাঁরা অনলাইনে আবেদন করে খাজনা খারিজ করে ফেলেছেন। ভূমি অফিসে গিয়ে কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার হননি তাঁরা। ভোগান্তির শিকার হলে অভিযোগ দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক আব্দুল কাদির মিয়া বলেন, ‘আমি ভূমি অফিসের সামান্য একজন স্টাফ। গ্রামের সাধারণ মানুষ খাজনা খারিজের জন্য আমাদের কাছে আসে। যদিও এখন অনলাইনে আবেদন করে খাজনা খারিজ নিতে হয়, কিন্তু গ্রামের মানুষ এসব না বোঝার কারণে আমাকে সহযোগিতার অনুরোধ করে।’ 

কাদির মিয়া আরও বলেন, ‘ভিডিওতে যে অভিযোগ আসছে, ওই ব্যক্তি একজন লোক নিয়ে আনুমানিক পাঁচ মাস আগে আমার কাছে আসে তার খারিজসহ বকেয়া খাজনা পরিশোধের জন্য। যদিও এটা আমার কাজ না, তবু পরিচিত হিসেবে আমাকে অনুরোধ করে। আমি শুরুতে না করলেও ওনার পীড়াপীড়িতে আমি রাজি হয়েছিলাম। কম্পিউটারে একটা খারিজের আবেদন ফি, পরচা ওঠানোর ফি, ডিসিআর ফি এবং জমির খাজনা বাবদ একটা আনুমানিক হিসাব তাঁকে বলেছিলাম।’ 

আব্দুল কাদির আরও বলেন, ‘উনি কেবল খাজনা খারিজের আবেদনসহ সরকারি যে ফি সেটিই আমাকে দিয়েছেন। বাড়তি কোনো টাকা দেন নাই বা আমি নেই নাই। এবং উনি খাজনা খারিজ পাঁচ মাস আগেই নিয়ে গেছেন। অভিযোগ থাকলে আরও আগেই তিনি সেটা করতে পারতেন। কয়েক দিন আগে ওনার (ভোলা মিয়া) সাথে থাকা লোকটা আরও কয়েকজনের সাথে বেশ কয়েকটা অন্যায় কাজের তদবিরে আমাদের অফিসে আসে। সে আমাকে সহযোগিতার জন্য প্রথমে অনুরোধ করে এবং পরে চাপ দিতে থাকে। অন্যায় কাজ হওয়ায় আমি রাজি না হওয়ায় তার মোবাইলে থাকা পাঁচ মাস আগের সেই ভিডিও আমাকে দেখিয়ে টাকা দাবি করে, নাইলে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি যেহেতু অন্যায় করি নাই, এ জন্য আপস করি নাই। তবে আমাকে বিপদে না ফেলার অনুরোধ করেছিলাম। এখন এ বিষয়ে আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শোকজ করেছেন, আমি বিধি মোতাবেক জবাব দেব।’ 

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া দুটোই অপরাধ। সরকার ভূমি সেবাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার জন্য ভূমি-সংক্রান্ত প্রায় সকল সেবা অনলাইন করেছে। মানুষ এখন ঘরে বসেই অনলাইনে নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ-সংক্রান্ত সকল সেবা নিতে পারেন। ভূমি সেবা-সংক্রান্ত সকল সেবা এখন অনলাইনে এসি ল্যান্ড, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার থেকে ভূমিসচিব পর্যন্ত মনিটর করেন। সুতরাং, ভূমিসেবা প্রদানে হয়রানি করার কোনো সুযোগ নাই। কেউ করলে অভিযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আলোচিত বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্তকে শোকজ করে তিন দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা ও জবাব চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মাইজখাপন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকেও ব্যাখ্যাসহ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অভিযুক্ত মূলত একজন অফিস সহায়ক, নামজারি সেবা বা ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সঙ্গে জড়িত হওয়ার এখতিয়ার বা সুযোগ তাঁর নেই। শোকজের জবাব অনুসারে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা হবে। এমনিতে মৌখিকভাবে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রোববার ব্যাখ্যাসহ তদন্ত প্রতিবেদন ও অফিস সহায়ক আব্দুল কাদিরের জবাব অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত