সুখের তো শ্যাষ নাই

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১২: ০৯
Thumbnail image

সবাই কাশবন ঘুরে এল, আমরাই বাদ! হতে পারে না।

এরই মধ্যে শরৎ যাই যাই করছে, তাই এক ছুটে দিয়াবাড়ী। আগে থেকেই শোনা, এখানে রয়েছে কাশের বন।

উত্তরার রাস্তাগুলোয় যান চলাচল বেড়েছে আবার। দোকানগুলোও খুলে গেছে। বিকেলের মৃদু আলোয় আকাশটা গাঢ় নীল। মাঝে মাঝে মেঘের আনাগোনা।

একটু পর আমরা যেখানে পৌঁছালাম, সেই জায়গাটিকে বলা হয় দিয়াবাড়ী বটতলা। একটু পরপরই সেখানে কাশবন। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে একটি খাল। তার পাশে খাবারের দোকান। চটপটি এখানেও ফেভারিট। তবে ফাস্টফুডের ভ্যানও দেখা গেল কয়েকটা।

কিছু দোকান আছে, যেখানে চা-বিস্কুট পাওয়া যায়। আমাদের দেখে একজন বললেন, তাঁর দোকানে গরুর খাঁটি দুধের চা পাওয়া যাবে। করোনার মধ্যে যেখানে-সেখানে মাস্ক খোলা যাবে না। তাই চা খাওয়ার এই উদার আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া গেল না।

এখানেই রয়েছে চরকি, বাচ্চাদের খেলনা। আর রয়েছে বন্দুকের খেলা। বেলুনগুলো বন্দুকের গুলি দিয়ে ফাটাতে হবে।

যিনি এই খেলাটি নিয়ে বসেছেন, তাঁর নাম আনোয়ার হোসেন। বেশ দিলখোলা মানুষ।

‘আপনি কত দিন এখানে বন্দুকের খেলা নিয়ে?’ 
‘প্রায় দুই বচ্ছর।’

‘প্রতিদিন আসেন?’
‘এখন আসি। মাঝে তো এক বছর করোনার সময় দ্যাশে ছিলাম।’

‘বাড়ি কোথায়?’
‘ময়মনসিংহ।’

‘দিয়াবাড়ীতে কি সব সময় ভিড় হয়?’
‘শুক্রবার হলে ভিড় হয়। শুক্রবারে হাজার-বারো শ ট্যাকা কামাই করি।’

‘অন্য দিন?’
‘অন্য দিন একটু কম হয়।’ বিজনেস-সিক্রেট মনে হয়, তাই টাকার পরিমাণটা আর বললেন না।

‘এখানে লোকজন কেমন আসে?’
‘৫টা-৬টার দিকে মানুষে ভইরা যায়। বোঝেন না, যাওনের জায়গা কই? এখানে খোলা হাওয়া। একটু তো ঘুরতে মন চাইবই।’

‘থাকেন কোথায়?’
‘এই উত্তরাতেই।’

‘ছেলেমেয়ে কয়জন?’
‘এক ছেলে এক মেয়ে। আর বউ।’

‘সংসার ভালোভাবেই চলে?’
‘আপনারে একটা সিক্রেট বলি। আমি আসলে গুল্লির খেলার ব্যবসাটা পার্টটাইম করি। আমার আরও একটা চাকরি আছে, গার্মেন্টসে। সেখানে আমি ফায়ার ডোরে কাজ করি।’
তাতে বোঝা যায়, আনোয়ার হোসেনের অভাব নাই।

‘বাড়িতে গিয়ে কী করেছিলেন?’ 
‘বাড়িতে তো আমার জমিজমা আছে। একটু চাষবাস করি।’

‘বর্গা দিয়েছেন?’
‘আরে না। নিজের জমিতে নিজেই চাষ করি। সময়মতো বাড়ি গিয়া চাষ করি। মাঝে মাঝে দেইখ্যা আসি।’

‘আচ্ছা, সুখ মানে কী?’
‘সুখ? সুখ মানে কথা হইল যে আমার, সুখের তো শ্যাষ নাই। ছেলেমেয়ে নিয়া আছি, এইটাই তো সুখ।’

এই কাশবনে না এলে এ রকম একজন সুখী মানুষের সঙ্গে তো দেখা হতো না! কাশবনের মতোই তাঁর মনটাও উড়ে চলেছে…

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত