ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে: গতির পথে যাচ্ছে প্রাণ

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ) 
Thumbnail image

কুয়াশা, যানের বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা—সব মিলিয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে এ সড়কে। এরপরও জোরদার করা হয়নি সড়কের নিরাপত্তা, আর বাড়েনি চালকদের মধ্যে সচেতনতা।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৪টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৮৫ জন আহত হয়েছেন, মারা গেছেন ১০ নারীসহ ২২ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই মারা গেছেন ১০ জন।

২২ ডিসেম্বর ভোরে এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর থেকে হাঁসাড়া পর্যন্ত ৪-৫ কিলোমিটার এলাকায় ৪টি জায়গায় যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান ও কাভার্ড ভ্যানসহ ১০টি গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসব দুর্ঘটনায় কোথাও গাড়ি সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে, কোথাও একটি আরেকটির পেছনে ধাক্কা দিয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় মো. ফরহাদ হোসেন (৪০) নামের এক চালক মারা যান। এরপর ২৭ ডিসেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বেপরোয়া বাসচাপায় ৬ জন নিহত ও আহত হন ৫ জন।

সাম্প্রতিক এ সবের পরও সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়তি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত শনিবার বেলা ২ থেকে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা থেকে শুরু করে শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়া পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সড়কের কোথাও কোনো পুলিশের টহল গাড়ি নেই। সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনের গতিসীমা উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ গাড়ি চলছে বেপরোয়া গতিতে। এ সময় এক্সপ্রেসওয়ের আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, সকাল-দুপুর, রাত-কুয়াশা-ঝড়বৃষ্টি সব সময় বেপরোয়া গতিতেই চলে গাড়ি। গত কয়েক সপ্তাহে প্রতি রাতেই এক্সপ্রেসওয়ের ওপর কুয়াশা পড়ছে। এতে খুব একটা নজর নেই চালকদের। সড়কে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তাঁরা।

এ বিষয়ে শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ঘন কুয়াশায় ফগ লাইট না জ্বালানো। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন না মেনে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালকদের গাফিলতি, ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা, যত্রতত্র গাড়ি থামানো, ত্রুটিযুক্ত গাড়ি রাস্তায় বের করার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রাতের আঁধারে, ঘন কুয়াশা এবং বৃষ্টির মধ্যে বেশি হয়। ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালালে, চালকদের বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ ও যাত্রীরা সচেতন হলে, দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন

সড়কে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। সম্প্রতি এই সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন পান্না বণিক।

তাঁর ভাগনি তুষি ঘোষ বলেন, ‘প্রায় আধা ঘণ্টা আমার মাসি ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে ছিলেন। কেউ উদ্ধার করতে আসেননি। আমাদের অন্য আহত ব্যক্তিরাও ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। আধা ঘণ্টা পর পুলিশ আসে। পরে তিনি মারা যান।’

হাঁসাড়া এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন আহমেদ জানান, সড়কের কুঁচিয়ামোড়া, ধলেশ্বরী টোল প্লাজা, হাঁসাড়া, ষোলঘর, পদ্মা থানা এলাকার কাছাকাছি বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ পুলিশ এসব এলাকায় নামমাত্র টহল দেয়।

পুলিশের টহলদারি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, প্রতিদিন রাতে দুটি গাড়ি দিয়ে ধলেশ্বরীর টোল প্লাজা থেকে শুরু করে মাওয়া এলাকার প্রায় ২৯ দশমিক ২ কিলোমিটারে টহল দিচ্ছেন তাঁরা। পুলিশের সামনে কম গতিতে গাড়ি চালালেও পুলিশ দূরে চলে গেলে আবার বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা। ফলে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

টিউলিপ সিদ্দিকের পতন ঘটাতে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ রাজনীতির আঁতাত

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

প্রকাশ্যে এল সাইফকে ছুরিকাঘাত করা যুবকের ছবি, যা বলছে পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত