মাহমুদ সোহেল
যত দিন যাচ্ছে, দেশে শব্দ দূষণ তত বাড়ছে। বিশেষত রাজধানীতে শব্দ দূষণ এক ভয়াবহ মাত্রা পেয়েছে। এটা এতটাই যে, ঢাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশদের প্রায় ১২ শতাংশ কানে কম শোনেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়। গবেষণা তথ্য বলছে, তীব্র দূষণের কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সদস্যদের ১১ দশমিক ৮ শতাংশই কানে কম শোনেন।
গবেষকেরা বলছেন, ঢাকার শব্দ দূষণের প্রধান কারণ দুটি। প্রথমটি গাড়ির হর্ন এবং দ্বিতীয়টি নির্মাণকাজ। রাজউকের কিছু বিধিনিষেধের কারণে ভবন নির্মাণে শব্দ এখন আগের চেয়ে কম হলেও গাড়ির হর্নের কারণে শব্দ দূষণ বেড়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ এখন আর নেই। সেই ধাপ পেরিয়ে আসার পর নীরবতা ভেঙে পুরো ঢাকা শহর জেগে উঠেছে। আর এই জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পুরো শহর আবারও শব্দ দূষণের কবলে পড়েছে। দেশি-বিদেশি নানা গবেষণায় বলা হচ্ছে, শহরের প্রায় সব এলাকাতেই শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। ঢাকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন এই দূষণের কবলে। কিন্তু কারও কোনো রা নেই। গাড়ির হর্ন বা নির্মাণকাজ তো আছেই, সঙ্গে মাইক লাগিয়ে চারপাশ কাঁপিয়ে নানা অনুষ্ঠানের বহর আছে। দিন বা রাত যেকোনো সময়ই যেকোনো অজুহাতে উচ্চ শব্দে মাইক বেজে চলাটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অথচ, বাংলাদেশে রাত ১০টার পর উচ্চ শব্দের অনুষ্ঠান আইনবিরোধী। এটি করলে শাস্তির বিধান আছে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায়। যদিও এটি জানেন না অনেকেই। বিধিমালা অনুযায়ী, এই আইন অমান্যকারীকে প্রথমবারের অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বারের অপরাধের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর অধীনে এই বিধিমালা প্রণীত হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই আইনে কারও শাস্তি হয়নি।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী ঢাকার এলাকাগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা। এলাকাভেদে শব্দের আলাদা মানমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে। শব্দ মাপার একককে ডেসিবেল বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনের বেলা (সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়ার কথা। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল ও রাতে ৫৫ ডেসিবেল, শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল ও রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দমাত্রা থাকার কথা। আর হাসপাতাল এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা থাকার কথা।
কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ঢাকায় শব্দের মাত্রা সব সময় বেশি থাকছে।
সম্প্রতি ঢাকার ১০টি স্থানে গবেষণা চালিয়ে এর চেয়ে বেশি শব্দ দূষণ পেয়েছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। গত এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই—এই চার মাস গবেষণাটি চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, ১০টি স্থানের মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ঘোষিত তিনটি নীরব এলাকাও রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—সংসদ ভবন এলাকা, শাহবাগ ও আহসান মঞ্জিল। এই তিন এলাকায় ৯৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ সময়জুড়ে শব্দ দূষণ মানমাত্রার চেয়ে বেশি ধরা পড়েছে। আবাসিক এলাকায় ৯৮ দশমিক ৩১ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকায় ৬৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, মিশ্র এলাকায় ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং শিল্প এলাকায় ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ সময় মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ দূষণ পাওয়া গেছে।
গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও ক্যাপসের পরিচালক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্বের সেরা শব্দ দূষণ শহরের একটি। এখানে আইন আছে, মানুষ তা জানে না। কারও কারও ধারণা নিজের বাসায় রাত-বিরাতে উচ্চ স্বরে গান বাজানো অপরাধ নয়। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো হেনস্তার শিকার হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে ঢাকায়।
শব্দ দূষণ কত ক্ষতি করতে পারে, ঢাকার অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আচরণগত পরিবর্তনও হয়। বিশ্বের যে দেশ যত উন্নত, সেই দেশের মানুষের মধ্যে তত সচেতনতা বাড়ছে। শব্দ দূষণের ক্ষতি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এখনই জোরালো প্রচার শুরুর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে ভয়ের তথ্য দিচ্ছেন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন শব্দ দূষণের মধ্যে থাকলে সেই ব্যক্তি অনেকাংশে বধির হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে দুশ্চিন্তা ও উগ্রতা বেড়ে যাওয়া এবং ঘুম কম হওয়ার সংকট বাড়ে। কমে যেতে পারে স্মরণশক্তি। সঙ্গে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ার বিষয়টি তো আছেই।
এক গবেষণার বরাত দিয়ে ঢাকার ৩৫ শতাংশ মানুষ কানে কম শোনে বলে জানান নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ঢাকার ১৪ শতাংশ মানুষের কানে অসুখ আছে। তাদের শ্রবণ শক্তি কমেছে। বাড়ছে হৃদ্রোগ। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। বধিরতা বাড়ছে। গর্ভে থাকা সন্তানও শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে।’
শব্দ দূষণের এই নেতিবাচক প্রভাবে কিন্তু শুধু ঢাকাবাসী নেই। দূষণের মাত্রা দেশের সব ছোট-বড় শহরেই বেশি। এতে মোটাদাগে দেশের ২০ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি কমে গেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত ২০১৩ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
অথচ শব্দ দূষণ বিধিমালা অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের বাইরে প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) এ সম্পর্কিত আইন প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু প্রচারের অভাবে বিষয়টি নাগরিকেরা জানেন না। থানায়ও অভিযোগ করেন না কেউ। আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
দীর্ঘ দিন ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করছেন বাপার নির্বাহী সহসভাপতি ডা. আব্দুল মতিন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘দেশের ৯০ ভাগ মানুষ শব্দ দূষণ কী, তা জানে না। টেলিভিশন ও বেতারে শব্দ দূষণের কুফল নিয়ে প্রচার বাড়াতে হবে।’
শব্দ দূষণ বন্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের অনুমতি আছে। বাকি সব হর্ন ব্যবহারই অবৈধ। সরকারি, ক্ষমতাশালী ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা ঢাকায় বেশি শব্দ দূষণ করছে। এই দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের কিছু নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কেউ। এই অপরাধের দায়ে আজ পর্যন্ত কারও সাজা হয়নি।
যত দিন যাচ্ছে, দেশে শব্দ দূষণ তত বাড়ছে। বিশেষত রাজধানীতে শব্দ দূষণ এক ভয়াবহ মাত্রা পেয়েছে। এটা এতটাই যে, ঢাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশদের প্রায় ১২ শতাংশ কানে কম শোনেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়। গবেষণা তথ্য বলছে, তীব্র দূষণের কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সদস্যদের ১১ দশমিক ৮ শতাংশই কানে কম শোনেন।
গবেষকেরা বলছেন, ঢাকার শব্দ দূষণের প্রধান কারণ দুটি। প্রথমটি গাড়ির হর্ন এবং দ্বিতীয়টি নির্মাণকাজ। রাজউকের কিছু বিধিনিষেধের কারণে ভবন নির্মাণে শব্দ এখন আগের চেয়ে কম হলেও গাড়ির হর্নের কারণে শব্দ দূষণ বেড়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ এখন আর নেই। সেই ধাপ পেরিয়ে আসার পর নীরবতা ভেঙে পুরো ঢাকা শহর জেগে উঠেছে। আর এই জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পুরো শহর আবারও শব্দ দূষণের কবলে পড়েছে। দেশি-বিদেশি নানা গবেষণায় বলা হচ্ছে, শহরের প্রায় সব এলাকাতেই শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। ঢাকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন এই দূষণের কবলে। কিন্তু কারও কোনো রা নেই। গাড়ির হর্ন বা নির্মাণকাজ তো আছেই, সঙ্গে মাইক লাগিয়ে চারপাশ কাঁপিয়ে নানা অনুষ্ঠানের বহর আছে। দিন বা রাত যেকোনো সময়ই যেকোনো অজুহাতে উচ্চ শব্দে মাইক বেজে চলাটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অথচ, বাংলাদেশে রাত ১০টার পর উচ্চ শব্দের অনুষ্ঠান আইনবিরোধী। এটি করলে শাস্তির বিধান আছে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায়। যদিও এটি জানেন না অনেকেই। বিধিমালা অনুযায়ী, এই আইন অমান্যকারীকে প্রথমবারের অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বারের অপরাধের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর অধীনে এই বিধিমালা প্রণীত হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই আইনে কারও শাস্তি হয়নি।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী ঢাকার এলাকাগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা। এলাকাভেদে শব্দের আলাদা মানমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে। শব্দ মাপার একককে ডেসিবেল বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনের বেলা (সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়ার কথা। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল ও রাতে ৫৫ ডেসিবেল, শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল ও রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দমাত্রা থাকার কথা। আর হাসপাতাল এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা থাকার কথা।
কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ঢাকায় শব্দের মাত্রা সব সময় বেশি থাকছে।
সম্প্রতি ঢাকার ১০টি স্থানে গবেষণা চালিয়ে এর চেয়ে বেশি শব্দ দূষণ পেয়েছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। গত এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই—এই চার মাস গবেষণাটি চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, ১০টি স্থানের মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ঘোষিত তিনটি নীরব এলাকাও রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—সংসদ ভবন এলাকা, শাহবাগ ও আহসান মঞ্জিল। এই তিন এলাকায় ৯৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ সময়জুড়ে শব্দ দূষণ মানমাত্রার চেয়ে বেশি ধরা পড়েছে। আবাসিক এলাকায় ৯৮ দশমিক ৩১ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকায় ৬৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, মিশ্র এলাকায় ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং শিল্প এলাকায় ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ সময় মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ দূষণ পাওয়া গেছে।
গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও ক্যাপসের পরিচালক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্বের সেরা শব্দ দূষণ শহরের একটি। এখানে আইন আছে, মানুষ তা জানে না। কারও কারও ধারণা নিজের বাসায় রাত-বিরাতে উচ্চ স্বরে গান বাজানো অপরাধ নয়। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো হেনস্তার শিকার হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে ঢাকায়।
শব্দ দূষণ কত ক্ষতি করতে পারে, ঢাকার অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আচরণগত পরিবর্তনও হয়। বিশ্বের যে দেশ যত উন্নত, সেই দেশের মানুষের মধ্যে তত সচেতনতা বাড়ছে। শব্দ দূষণের ক্ষতি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এখনই জোরালো প্রচার শুরুর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে ভয়ের তথ্য দিচ্ছেন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন শব্দ দূষণের মধ্যে থাকলে সেই ব্যক্তি অনেকাংশে বধির হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে দুশ্চিন্তা ও উগ্রতা বেড়ে যাওয়া এবং ঘুম কম হওয়ার সংকট বাড়ে। কমে যেতে পারে স্মরণশক্তি। সঙ্গে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ার বিষয়টি তো আছেই।
এক গবেষণার বরাত দিয়ে ঢাকার ৩৫ শতাংশ মানুষ কানে কম শোনে বলে জানান নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ঢাকার ১৪ শতাংশ মানুষের কানে অসুখ আছে। তাদের শ্রবণ শক্তি কমেছে। বাড়ছে হৃদ্রোগ। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। বধিরতা বাড়ছে। গর্ভে থাকা সন্তানও শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে।’
শব্দ দূষণের এই নেতিবাচক প্রভাবে কিন্তু শুধু ঢাকাবাসী নেই। দূষণের মাত্রা দেশের সব ছোট-বড় শহরেই বেশি। এতে মোটাদাগে দেশের ২০ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি কমে গেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত ২০১৩ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
অথচ শব্দ দূষণ বিধিমালা অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের বাইরে প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) এ সম্পর্কিত আইন প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু প্রচারের অভাবে বিষয়টি নাগরিকেরা জানেন না। থানায়ও অভিযোগ করেন না কেউ। আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
দীর্ঘ দিন ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করছেন বাপার নির্বাহী সহসভাপতি ডা. আব্দুল মতিন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘দেশের ৯০ ভাগ মানুষ শব্দ দূষণ কী, তা জানে না। টেলিভিশন ও বেতারে শব্দ দূষণের কুফল নিয়ে প্রচার বাড়াতে হবে।’
শব্দ দূষণ বন্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের অনুমতি আছে। বাকি সব হর্ন ব্যবহারই অবৈধ। সরকারি, ক্ষমতাশালী ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা ঢাকায় বেশি শব্দ দূষণ করছে। এই দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের কিছু নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কেউ। এই অপরাধের দায়ে আজ পর্যন্ত কারও সাজা হয়নি।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের অনুসমর্থনের ভিত্তিতে একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের জন্য গত ৪ বছর ধরে আমাদের এই সংগঠন কাজ করছে। গত ১৮ আগস্ট শাহবাগ চত্বরে এক সংহতি সমাবেশের মাধ্যমে আমরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর...
৪ মিনিট আগেগণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলো আপসের পথে হাঁটছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আপস করা হয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে। দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টাও চলছে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
১১ মিনিট আগেকমলাপুর স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে রিকশাচালকদের অবরোধে জুরাইন রেল স্টেশনে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার আটকে যায় ৷ খুলনাগামী নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেন আটকে আছে কমলাপুরের শহরতলি স্টেশনে ৷
১৮ মিনিট আগেচুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিরাজ হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়...
৩৯ মিনিট আগে