রাজবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর ১২ দিকে শহরের কোর্ট চত্বর এলাকায় এই সংঘর্ষ হয়। এতে ৪ পুলিশ সদস্যসহ বিএনপির ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। 

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপির শোভাযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়েছে। সেই সঙ্গে কয়েকজনকে আটকও করেছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। 

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, আজ সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জেলা শহরের কোর্ট চত্বর এলাকায় রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের বাসভবনে জড়ো হতে থাকেন। 

দুপুর ১২টার দিকে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রাটি কোর্ট চত্বর প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা মোড়ে আসলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় বিএনপির অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হন। 

রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস‍্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই কর্মসূচি পালন করব। তারা আমাদের রোডম‍্যাপ করে দিয়েছিল। আমরা সেই নিয়মেই শোভাযাত্রা বের করি। শহরের পান্না চত্বর থেকে ফেরার পথে কোর্ট চত্বর এলাকায় পুলিশ আমার নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেন। কেন গুলিবর্ষণ করল কিছুই বুঝলাম না। আমরা তো শান্তিপূর্ণভাবেই শোভাযাত্রা নিয়ে ফিরছিলাম।’ 

আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম আরও বলেন, ‘ঘটনায় আমার বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’ 

এদিকে বেলা ১টার দিকে রাজবাড়ী রেলস্টেশনে রেলওয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান বিএনপির নেতা-কর্মীরা। হামলায় রেলওয়ে পুলিশের ওসিসহ চার সদস‍্য আহত হয়েছেন। 

রাজবাড়ী জিআরপি থানার ওসি সোমনাথ বসু বলেন, ‘দুপুরে গোয়ালন্দ থেকে খুলনাগামী মেইল ট্রেন রাজবাড়ী স্টেশনে পৌঁছায়। সে সময় ট্রেনের টিকিটের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা যাত্রীদের বলেন আপনারা টিকিট ছাড়া কেউ ট্রেনে উঠবেন না। এ সময় কিছু যাত্রী বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠতে যায়। তখন রেলওয়ে পুলিশের সদস‍্যরা গেলে তাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়। হামলায় আমিসহ চার পুলিশ সদস‍্য আহত হই। এর মধ্যে দুজনকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সংখ‍্যায় চার থেকে পাঁচ শ ছিল। যে কারণে আমরা তাদের প্রতিহত করতে পারি নাই।’

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জিআরপি থানায় হামলার ঘটনাটি একটু ভিন্ন ছিল। ট্রেনের টিকিট কাটা নিয়ে বিএনপির এই গ্রুপটাই ওখানে গিয়ে হামলা চালায়। এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

এসপি আরও বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করার জন‍্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে নির্দেশনা দেওয়া ছিল। কিন্তু মিছিলের পেছন থেকে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষায় কিছু টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে পুলিশের কয়েকজন আহত আছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত করে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। এ ঘটনায় বিএনপির ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।’