ঢাকায় হবে দেশের প্রথম ট্রাফিক শিশুপার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ২০: ০৪

রাজধানীতে ট্রাফিক শিশুপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। আজ শনিবার যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট’ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই ট্রাফিক শিশুপার্ক করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার ইরিয়ে, প্রজেক্ট গবেষক সুজিমুরা, অফিস সেক্রেটারি (কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) সামমুন সুলতানা, কমিউনিকেটর সুজানা আকিকো হুসাইন এবং ডিএমপির মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কেএন রায় নিয়তি। 

সংবাদ সম্মেলনে ইরিয়ে এবং প্রকল্প গবেষক সুজিমুরা প্রকল্প সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অফিস সেক্রেটারি সামমুন সুলতানা। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ট্রাফিক আইন-কানুন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে একটি শিশুপার্ক করা হবে। দেশে এখনো এ ধরনের কোনো অবকাঠামো নেই। এখানে ট্রাফিক সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া থাকবে। প্রথমে একটা-দুইটা হলে পরবর্তীতে আরও করা সম্ভব হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা শহরে কেন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, এ ব্যাপারে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, ডিএমপি কীভাবে কাজ করছে—সেসব বিষয়ে জাইকা কাজ করছে। এরই মধ্যে রাজারবাগ স্কুলে শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে। রাস্তা খালি পেয়ে মানুষ ট্রাফিক আইন মানতে চায় না। মানুষের এসব চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আনাই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হবে তারা এগুলো ভবিষ্যতে অনুসরণ করবে। 

কর্মকর্তারা বলেন, আমরা জানি ট্রাফিক আইন মানা বা সড়ক দুর্ঘটনা খুব স্বল্পসময়ের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা যেভাবে কাজ করছি তা পাঁচ থেকে দশ বছর পর ফলাফল পাব। এসব শিক্ষার্থী যখন নিজে গাড়ি চালাবে বা রাস্তা পারাপার হবে, তখন যেন এখন আমরা যা শেখাচ্ছি সেই নিয়ম মেনে চলতে পারে। এ জন্য আমরা স্কুল থেকে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি। 

ট্রাফিক আইন-কানুন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি শিশুপার্ক নির্মাণ করা হবে। দেশে এ ধরনের অবকাঠামো এখনো নেই। এখানে ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া থাকবে। জাইকার কর্মকর্তারা বলেন, এটা আমাদের ছোট্ট একটা প্রজেক্ট। প্রথমে একটা-দুইটা তৈরি হলে পরবর্তীতে আরও করা সম্ভব হবে। 

এ ছাড়া জেব্রাক্রসিংয়ের প্রজেক্টের পরিকল্পনা আছে বলেও জানিয়েছে জাইকার প্রকল্প কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, আমরা পাঁচ-দশ বছর বা তার বেশি সময়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে থাকি। তবে এবারের প্রকল্পটা অনেক ছোট। এটিতে যদি সাধারণ মানুষসহ সবার সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে বড় পরিসরে করা হবে। বর্তমানে যানজট নিরসনে ডিএমপি এলাকায় কার্যক্রম চালু করা হবে। পরবর্তী দেশজুড়ে এই ধরনের কার্যক্রম চলবে। 

জাপানও এভাবে তাদের সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও সড়কে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে জানিয়ে জাইকার অফিস সেক্রেটারি সামমুন সুলতানা বলেন, ‘জাপানে একসময় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এত ভালো ছিল না। কিন্তু এখন তারা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অনন্য উদাহরণ। তারাও সড়ক সম্পর্কিত সচেতনতা ও জ্ঞান স্কুল থেকে শুরু করেছিল। যার কারণে এখন ফলাফল পাচ্ছে।’ 

রাজধানীর বিভিন্ন পরিবহনের চালকদের সফটওয়্যার প্রজেক্ট নিয়ে কাজ চলছে জানিয়ে জাইকার কর্মকর্তারা বলেছেন, পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটিও রয়েছে। বর্তমানে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে ডিএমপির একটি শাখাকে ধরে কাজ চলছে। সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এই সফটওয়্যার চালু করা হবে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। এতে বেরিয়ে আসবে সড়কের কোন কোন জায়গায় দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে; এটার জন্য কী কী করতে হবে। এই সফটওয়্যারে চালুর পর তাৎক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশ তথ্য পাঠাতে পারবে, যা ডেটাবেইসে থাকবে। 

উল্লেখ্য, রাজধানীর যানজট নিরসনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে কাজ করছে জাইকা। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট’। প্রাথমিক পর্যায়ে তিন বছর মেয়াদি প্রজেক্টের কার্যক্রম এরই মধ্যে এক বছর হতে চলেছে। সফলতা মিললে পরবর্তীতে এর মেয়াদ বাড়ানো হবে। আর প্রকল্পটিতে পুরোটাই অর্থায়ন করছে দেশটি। 

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রজেক্টে ডিএমপির ছাড়াও বিআরটিএ, বিআরটিসি, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট বিভিন্ন সহযোগিতা করছে। তবে প্রকল্পে কত ব্যয় হচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়নি জাইকা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত