Ajker Patrika

মুন্সিগঞ্জ ৬ ঘণ্টা রণক্ষেত্র, নিহত ৩, আহত শতাধিক

সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জ ৬ ঘণ্টা রণক্ষেত্র, নিহত ৩, আহত শতাধিক

মুন্সিগঞ্জ শহরে এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩ জন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিক, ছাত্র, সাধারণ মানুষসহ আহত হয়েছেন শতাধিক।

আজ রোববার সকাল পৌনে ১০টার দিকে জেলা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। হতাহত, গুলি, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাটসহ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। 

নিহতরা হলেন— রিয়াজুল ফরহাজী (৩৮)। তিনি শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরহাজী। একই এলাকার মো. সজল (৩০) এবং ডিপজল (১৯) নামে এক তরুণ। এর মধ্যে রিয়াজুল এবং ডিপজল ঘটনাস্থলে এবং সজলকে হাসপাতাল নেওয়ার সময় মারা যান বলে জানান তাঁর স্বজনেরা। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে শহরে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীরা বিচ্ছিন্ন ভাবে আসতে থাকে। সে সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা শিক্ষার্থীদের পেটানো শুরু করে। ঘটনাস্থলের ঠিক ২০ মিটারের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ সদর পুলিশ ফাঁড়ি। সেখানে দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ। এ ঘটনার ৫–১০ মিনিটের মধ্যে আন্দোলনকারীরা শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ সড়ক দিয়ে সুপার মার্কেট এলাকায় আসতে চাইলে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা–কর্মীরা বন্দুক, ছুড়ি, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা শুরু করে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। 

দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র, ককটেল নিয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। পরে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে নৌ ও সড়ক পথে ঢাকায় পাঠানো হয়। 

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা জামাল বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন মৃত ছিলেন। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাআন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সকালে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁদের মারধর শুরু করে। পরে পাল্টাপাল্টি হামলা হয়। 

এদিকে, সংঘর্ষে হতাহতের ছবি ও ভিডিও করার সময় ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে বেধড়ক পেটায় আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকেরা। এতে এনটিভির মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি মঈনুদ্দিন সুমন, ডেইলি ট্রাইব্যুনালের ফরহাদ হেসেন, যমুনা টেলিভিশনের ফটো সাংবাদিক হৃদয় হাসান ও সমকালীন কাগজের মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি মো. সুমন আহত হন। 

গুলিবিদ্ধ আহতের এক স্বজন মো. রহম বলেন, আহতদের মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়ক পথে বাধা দিচ্ছে। আমরাসহ অনেকেই ট্রলারে করে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকার দিকে গেছি। কী নির্মম অবস্থা! মারার পর চিকিৎসা নিতেও দিচ্ছে না!

এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, দিনব্যাপী দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য ধরেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। পুলিশ ব্যক্তিগতভাবে কোনো পক্ষকে উদ্দেশ্য করে টিয়ার শেল ছোড়েনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত