চুরি করতে গিয়ে মেলেনি ধনসম্পদ, চিনে ফেলায় কেয়ারটেকারকে হত্যা: পুলিশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কেয়ারটেকার ওহাব মাতুব্বর হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একটি বিলাসবহুল বাড়ির কেয়ারটেকার ওহাব মাতুব্বর (৭০) হত্যাকাণ্ডের রহস্য পুলিশ উন্মোচন করেছে। পুলিশ বলছে, বাড়িতে ধনসম্পদ থাকার সন্দেহে চুরি করতে যায় স্থানীয় এক ব্যক্তিসহ তিনজন। কাঙ্ক্ষিত ধনসম্পদ না পেয়ে এবং ওই বাড়ির কেয়ারটেকার তাঁদের চিনে ফেলায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং হত্যাকাণ্ডের আলামত হিসেবে একটি হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা আলেখারকান্দা গ্রামের আল-আমিন কাজী (৪০), সদরপুর উপজেলার চরব্রাহ্মণদী গ্রামের অভি হাওলাদার (২৪) ও জেলা সদরের হাড়ুকান্দি এলাকার আব্দুর রহমান (২০)। তাঁরা একে অপরের পূর্বপরিচিত বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে আব্দুর রহমানের নামে একটি চুরির মামলা রয়েছে এবং তিনি আগে মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল। এর আগে ৮ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার নাছিরাবাদ ইউনিয়নের আলেখারকান্দি গ্রামের মৃত চিকিৎসক জামাল উদ্দিন খলিফার বিলাসবহুল বাড়ি থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওহাব মাতুব্বরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় বোন নূরজাহান বেগম (৭৫) ভাঙ্গা থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে তদন্তকালে প্রতিবেশী আল-আমিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন এবং অন্য দুজনের নাম-ঠিকানা প্রকাশসহ হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষ বর্ণনা দেন বলে জানান পুলিশ সুপার।

পুলিশ সুপার আরও জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর ভোররাতে চিকিৎসকের বাড়িতে চুরি করতে যান আসামিরা। ওই রাতেই বাড়ির দোতলায় তাঁকে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের কারণ উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, আসামিরা আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন যে বাড়িতে ধনসম্পদ আছে। পরে তাঁরা যোগসাজশে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন এবং বাড়ির আলমারিসহ বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে দেখে ধনসম্পদ আছে কি না। তখন ফজরের নামাজ পড়া শেষে বাড়ির ভেতরে মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে দোতলায় যান ওহাব। তখন পাশের বাড়ির আল-আমিনকে চিনে ফেলায় মূলত তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

বাড়ির কোনো মালপত্র খোয়া গেছে কি না. এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, বাড়ির মালিক মৃত চিকিৎসক জামাল উদ্দিনের মেয়ে ফারহার সঙ্গে কথা হয়। ফারহা ইউএসএ অ্যাম্বাসিতে চাকরি করেন। তিনি আমাদের জানান, বাড়িটিতে কিছু আসবাবপত্র এবং থালাবাসন ছাড়া তেমন কিছুই নেই। সে ক্ষেত্রে তেমন কিছুই খোয়া যায়নি।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আট দিন পর লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, বাড়িটিতে কেয়ারটেকার ওহাব মাতুব্বর ছাড়া কেউ থাকেন না। ৮ জানুয়ারি সকালে ভাইকে দেখতে ভেজানো চিতইপিঠা নিয়ে ওই বাড়িতে যান বোন নূরজাহান বেগম। ডাকাডাকি করে ভাইকে না পেয়ে বাড়িতে চলে আসেন এবং ওই চিকিৎসকের স্ত্রী কামরুন্নাহার হেনাকে মোবাইলে কল করে ভাই কোথায় জিজ্ঞাসা করেন। পরে কামরুন্নাহার হেনা স্থানীয় এক ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনে কল করে তাঁর বাড়িতে যেতে বলেন। ওই ব্যক্তি আরও কয়েকজনকে নিয়ে ওই বাড়িতে যান। ডাকাডাকি করে ওহাব মাতুব্বরকে না পেয়ে একপর্যায়ে চিলেকোটায় রশি দিয়ে হাত-পা বাঁধা উপুড় অবস্থায় তাঁর লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশকে ৯৯৯-এ কল করে জানান তাঁরা। পরে ভাঙ্গা থানা-পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ বিন কালাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) আসিফ ইকবাল, ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোকছেদুর রহমানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিউলিপের পদত্যাগপত্রের জবাবে যা লিখলেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার

সংবিধানের অস্তিত্ব নেই, প্রোক্লেমেশন না হলে বিপদ: বিচারপতি আব্দুর রহমান

পদত্যাগপত্রে যা লিখলেন টিউলিপ সিদ্দিক

টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন

কার্যালয় থেকে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি সরানোর ব্যাখ্যা দিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত