এস কে সিনহার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিলেন ভাই ও দুই ভাতিজা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ মে ২০২২, ২২: ৩২
Thumbnail image

ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন তাঁর ভাই ও দুই ভাতিজা। আজ সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তাঁরা জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দি দিয়েছেন এস কে সিনহার আপন ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা, ভাতিজা শংখজিত সিংহ ও সুজন কুমার সিনহা। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নরেন্দ্র কুমার সিনহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদ, শংখজিতের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম ও সুজনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন মহানগর হাকিম মেহেদী হাসান।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এস কে সিনহার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন, তাঁর ভাই এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় নিজের নামে রাজউকের প্লট বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ভাইয়ের নামে পূর্বাচলে তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। প্লট বরাদ্দ-সংক্রান্ত আবেদন ও অন্যান্য কাগজপত্রে এস কে সিনহা নরেন্দ্র কুমার সিনহার স্বাক্ষর নেন। তবে সেটি নরেন্দ্র সিনহার নামে আর বরাদ্দ নেই। এরপর আবারও প্রভাব খাটিয়ে তিন কাঠার প্লটকে পাঁচ কাঠায় উন্নীত করে রাজউকের উত্তরা প্রকল্প স্থানান্তর করেন এস কে সিনহা। সেখানে নয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ভবন নির্মাণে ৬ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়। 

অন্যদিকে শংখজিত জবানবন্দিতে বলেন, এস কে সিনহা তাঁর কাকা। তাঁকে ডেকে রাজউকের উত্তরা প্রকল্প পাঁচ কাঠা প্লটের ভবন নির্মাণের জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়োগ দেন কাকা। পরে পূর্বাচলে নয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। আরেক ভাতিজা সুজন কুমার সিনহা আদালতের কাছে জবানবন্দিতে বলেন, তাঁর কাকা এস কে সিনহার নিজের নামে রাজউকের প্লট থাকা সত্ত্বেও আবার প্লট বরাদ্দ নেন। বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য কাগজপত্রে তাঁর স্বাক্ষর নেন। কিন্তু কোনো বিষয়ে তিনি নিজে বুঝে স্বাক্ষর করেননি। এস কে সিনহার কথায় তিনি এসব করেছেন। 

জবানবন্দি শেষে তাঁরা নিজেদের জিম্মায় চলে যান। 

এর আগে গত বছর ১০ অক্টোবর দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১–এ মামলাটি করেন। মামলায় এস কে সিনহার বিরুদ্ধে নিজের ভাই ও আত্মীয়ের নামে ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা সম্পদ অর্জন করে তা স্থানান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

গুলশান আনোয়ার নিজেই মামলার তদন্ত করছেন। আজ তিন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে তাঁদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। 

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে উত্তরা আবাসিক এলাকায় নিজের নামে একটি প্লট বরাদ্দ নেন। পরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামেও রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। এরপর তিন কাঠার প্লটটি পাঁচ কাঠায় উন্নীত করেন। প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচলের প্লটটিকে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর সড়কে (বাড়ি নম্বর ১/এ) স্থানান্তর করিয়ে রাজউকের অনুমোদন নেন। বরাদ্দপ্রাপ্তির পর প্লটটি আত্মীয় শংখজিৎ সিংহকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়োগ করেন। 

অনুসন্ধানে নথিপত্রে দুদক তথ্যপ্রমাণ পায় যে, এস কে সিনহা নিজেই উত্তরার ওই প্লটের অনুকূলে রাজউকে মোট ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরে তাঁর তত্ত্বাবধানেই ওই প্লটে নয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে এ নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করে দুদক। 

রাজউকের প্লটের মূল্য ৭৫ লাখ টাকা ও ভবন নির্মাণের ব্যয় ৬ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকাসহ সব মিলিয়ে ৭ কোটি ৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে জনৈক খালেদা চৌধুরীর কাছ থেকে ভবনের একটি ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রিম ৭০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এই টাকা বাদে অবশিষ্ট ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা এবং আত্মীয় শংখজিৎ সিংহের নামে একটি ব্যাংক হিসাবে স্থায়ী ও নগদে ৭৮ লাখ টাকা পাওয়া গেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। 

মামলায় দুদকের অভিযোগ, এস কে সিনহা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোট ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা সম্পদ অর্জন করে ভাই ও আত্মীয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেন। এ সম্পদ অর্জনের বৈধ কোনো উৎস নেই এবং তা তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত