গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত

গাজীপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার অধিকাংশ কারখানা বন্ধ থাকলেও বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। 

সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পোশাক শ্রমিকেরা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করলেও পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা তাদের কয়েক দফা সরিয়ে দেয়। 

জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন ভোগড়া বাইপাস এলাকার আশপাশের শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে আজ বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ করেন। শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ মহাসড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেয়।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকার টিএম ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ করে। তখন শিল্প পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর থেকে গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘের বাজার ও নতুন বাজার এলাকা আন্দোলনে নামে পোশাক শ্রমিকেরা।

স্থানীয় এসএম নীটওয়্যার, হাই ফ্যাশন লিমিটেড, গোল্ডেন রিফিট, মন্ডল নীট ওয়্যার, সিলিকনসহ ৭টি কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় প্রথমে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে চলে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তারা আবারও মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছালে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যায়।

শিল্প পুলিশ-২, গাজীপুরের শ্রীপুর সাব-জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদ বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সদর উপজেলার বাঘের বাজার ও নতুন বাজার এলাকায় কিছু কারখানার শ্রমিক বের হয়ে এসে জমায়েত হয়েছিল। 

পর্যায়ক্রমে তাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। পরে তারা পুলিশ তৎপরতার মধ্যে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির মেঘনা কারখানা এলাকায় এসে যার যার মতো চলে যায়। তারা কোনো ধরনের নাশকতামূলক কাজ করেনি।

রাস্তায় র‍্যার ও পুলিনিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গাজীপরে বিভিন্ন এলাকায় পৌনে ২০০ কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব কারখানার কর্তৃপক্ষ কোনো কোনটি গত মঙ্গলবার থেকে, কোনটি বুধবার আবার কোনটি বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। 

বিজিএমইএর সহসভাপতি ও কালিয়াকৈর এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান সাদমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তা ও যে কোনো অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে গাজীপুরের চান্দনা থেকে জেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উভয় পাশের প্রায় সব কারখানা ছুটি (সাময়িক বন্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, তিনি সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি সারেয়ার আলম বলেন, গাজীপুর মহানগর ও আশপাশের এলাকা ছাড়াও কালিয়াকৈর ও গাজীপুর সদর এলাকায় গতকাল বুধবার ৩ শতাধিক কারখানা বন্ধ ছিল। কিন্তু আজকে (বৃহস্পতিবার) আগের চেয়ে পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় অনেক কারখানা খুলেছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকা কারখানার সংখ্যা ১৮৬টার মতো হতে পারে। 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুরে পরিস্থিতি অনুযায়ী বেশ কিছু কারখানা সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কিছু খুলেছে। নতুন করে আরও কয়েকটি ছুটি দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকৃত সংখ্যা জানা সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো শিল্প এলাকার পরিস্থিতি শান্ত করা জন্য সবাই একসাথে কাজ করছি।’

উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকায় শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। পরে এ আন্দোলন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত