উত্তরায় আন্দোলনকারী-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অন্তত ৫

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৩২
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৫৯

রাজধানীর উত্তরায় অসহযোগ ও এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। এতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

এর আগে রোববার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজলক্ষ্মী থেকে বিএনএস সেন্টার পর্যন্ত অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। 

সরেজমিন দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরার আজমপুরে পুলিশের পাশ থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাত্রদের বাধা দিলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা কতিপয় দুষ্কৃতকারীদের অস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়তেও দেখা যায়। পরে আন্দোলনরতরা তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশ থেকে হেলমেটধারী কতিপয় অস্ত্রধারীকে পিস্তল, শটগান নিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে তাদের হাতে রামদা, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করতে দেখা যায়। 

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আজমপুরের রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেটের নিচতলার ঢাকা মেডিসিন কর্নারের নিচে একজনকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গুলি করেছে। তাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরাও রয়েছে। ছাত্রলীগের ছোড়া গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছে।’

এদিকে সোয়া ১২টার দিকে আজমপুর থেকে একজনকে অচেতন অবস্থায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে এবং আরেকজনকে রিকশায় ৭ নম্বর সেক্টরের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

আন্দোলনরত আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা হাইস্কুল, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আজমপুর রেলগেট এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিস্তল, শটগান, চাপাতি, চাকু, ছুরি, লোহার রড নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের করা গুলিতে তিন–চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

বেলা দেড়টার দিকে আজমপুর রেলগেট এলাকা থেকে অল্প বয়সী এক যুবককে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় রিকশায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দুজনকে সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজমপুরের দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। 

এ ছাড়া রাজলক্ষ্মী এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের দাবি, ছাত্রলীগের হেলমেটধারী নেতা-কর্মীদের গুলিতে একজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

গুলির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা পুলিশ কোনো গুলি ছুড়িনি। গুলি তো দূরের কথা টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেডও মারা হয়নি।’ 

ওসি শাহ আলম আরও বলেন, ‘আমরা আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর কোনো অ্যাকশনে যাওয়া তো দূরের কথা, তাদের সঙ্গে কোনো উচ্চবাচ্যও করিনি। তারা তাদের মতো আন্দোলন করছে।’ 

সর্বশেষ বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার রাজলক্ষ্মী থেকে হাউজবিল্ডিং পর্যন্ত আন্দোলনরতদের দখলে রয়েছে। এ সময় তাদের উত্তরার আজমপুর, রাজলক্ষ্মী, বিএনএস সেন্টার এলাকার সড়কে টায়ার, লাঠিসোঁটায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানে হামলা–ভাঙচুর চালাতে দেখা যায়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত