স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে ‘আব্বা’ ডেকেও বাঁচতে পারেননি রাসেল

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭: ৩৫
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২০: ৫৯

ঢাকার কেরানীগঞ্জে রাতভর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে রাসেল (৩২) নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব হোসেন রাব্বির নেতৃত্বে তাঁর অফিসে গত মঙ্গলবার সারা রাত ১৫-২০ জন যুবক রাসেলের ওপর নির্যাতন চালান। গতকাল বুধবার ভোরে স্বজনেরা রাব্বির অফিস থেকে অচেতন অবস্থায় রাসেলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাব্বির পক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করতেন রাসেল। চাঁদার টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে রাব্বি রাসেলকে সন্দেহ করে। এরই জের ধরে গতকাল রাতে তেলঘাট এলাকার পারভীন টাওয়ারের নিচতলায় রাব্বির অফিসে ডেকে আনা হয় রাসেলকে। সেখানে সবাই মিলে মদ্যপান করেন। এরপর মদ্যপ অবস্থায় রাব্বির নেতৃত্বে রাসেলের ওপর রাতভর চলে অমানুষিক নির্যাতন।

এরই মধ্যে রাসেলের ওপর নির্যাতনের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাসেলের পরনে কোনো জামা নাই। খালি গায়ে থাকা রাসেলকে কয়েকজন টানাহেঁচড়া করছেন। প্রচণ্ড মারধরে আধমরা অবস্থায় রাসেল রাব্বিকে বলছেন, ‘আব্বা আব্বা, রাব্বি আব্বা, আপনি আমার বাপ, আমারে বাঁচান।’

অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অচেতন অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে রাসেলকে। একজন তাঁকে গালিগালাজ করছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেঝেতে নিথর দেহ রাসেলের। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। কেউ একজন সেটা মুছে দিচ্ছেন।

স্বজনেরা গতকাল ভোরে রাব্বির অফিস থেকে রাসেলকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা জানান, রাব্বির বাবা শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি বাসের উদ্দিন। তিনি শুভাঢ্যা ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের ভাতিজা। বছরখানেক আগে বাবা ও চাচার প্রভাব খাঁটিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন রাব্বি। পদ পাওয়ার পর বিশাল বাহিনী নিয়ে চলাফেরা শুরু করেন রাব্বি। তাঁর বাহিনীর লোকজন স্থানীয় বিচার-সালিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানদার ও রাস্তাঘাট থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব হোসেন রাব্বির সঙ্গে রাসেল।রাব্বির অফিসে নিয়মিত বসানো হয় নেশার আসর। নিহত রাসেল রাব্বির পক্ষে চাঁদা আদায়ের কাজ করতেন। তিনি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাসানচর গ্রামের তোফাজ্জল হাওলাদারের ছেলে। রাসেল দুই সন্তানসহ পরিবার নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

এদিকে রাসেলকে হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় রাসেলের পিতা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় বাব্বিসহ ১৩ জনকে এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকে রাব্বি পলাতক থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাব্বির চাচা ও স্থানীয় শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাসেল চাঁদাবাজ ছিল। এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ে সে মারা গেছে।’

এ বিষয়ে নিহতের বাবা তোফাজ্জল হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম জানান, মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত