Ajker Patrika

অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ, ডিএনসিসি কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা

নুরুল আমিন হাসান, ঢাকা
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৮: ০৫
অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ, ডিএনসিসি কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা

অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডিএম শামিম ওরফে দেওয়ান মোহাম্মদ শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক যুবতী (২৮)। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো উত্তর শাখা মামলাটির তদন্ত করছে। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম জানান, গত ১০ অক্টোবর ঢাকার ৯ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই যুবতী। মামলায় শামীমের সহযোগী হিসাবে শফিকুল ইসলাম (৩৮) ও মো. রুহুল আমিন (৫২) নামের আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। 

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২ মার্চ ‘কাউন্সিলরের উন্নয়নমূলক প্রতিবেদন’ তৈরির সুবাদে কাউন্সিলর শামীমের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয়। কাজের টাকা দেওয়ার কথা বলে ৬ মার্চ সন্ধ্যায় কাউন্সিলর মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীকে তাঁর অফিসে যেতে বলেন। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় কাউন্সিলর অফিসের দ্বিতীয় তলায় ভুক্তভোগী যান। সেখানে কথাবার্তার একপর্যায়ে তাঁকে তৃতীয় তলার একটি রুমে নিয়ে দরজা লক ও ছিটকিনি মেরে দেন কাউন্সিলর। এরপর তিনি নিজের পিস্তল বের করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। ঘটনা কাউকে জানালে কাউন্সিলর মেয়েটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং একই সময় বিয়ে করার আশ্বাসও দেন। 

ওই ঘটনার এক সপ্তাহ পর থেকে প্রায়ই শুক্র ও শনিবার ভুক্তভোগীকে ডেকে এনে গাজীপুরের পুবাইলের শাহিনের বাংলো বাড়িতে নিয়ে যেতেন ডিএম শামীম। সেখানে শফিকুল ইসলাম ও রুহুল আমি পাহারা দিত। আর কাউন্সিলর মেয়েটিকে ধর্ষণ করতেন। 

সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই মেয়েটির ভাড়া বাসা দেওয়ান বাড়িতে যান কাউন্সিলর ডিএম শামীম। সেখানেও অস্ত্রের মুখে ফের ধর্ষণ করেন। পরদিন ৫ অক্টোবর ভুক্তভোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা শেষে গত ৭ অক্টোবর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। 

ভুক্তভোগী ওই যুবতী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রথমে কাউন্সিলর শামীম অফিসের একটি রুমে আমার সঙ্গে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করেন। তারপর কাউকে কিছু না বলার ভয়ভীতি দেখান এবং বিয়ে করারও আশ্বাস দেন। এদিকে ভয়ে তাঁর কথায় রাজি হলে তিনি বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকেন। বিষয়টি আমার বাবা-মা জানতে পারলে তাঁরাও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।’ 

ওই তরুণী আরও বলেন, ‘তখন কাউন্সিলর ডিএম শামীম আমাকে একটা বাসায় রেখে দিয়েছিলেন। সেই বাসায় তিনি ফার্নিচার, আসবাবপত্রও দিয়েছিলেন। তিনি দক্ষিণখানের ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ওই সময় তিনি উত্তরার আগোরার শপিংমল থেকে আমাকে দিয়ে বাজার করাতেন। বাজারের রশিদ তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হলে তিনি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেই বিলের টাকাও পরিশোধ করতেন।’ 

ভুক্তভোগী তরুণী আরও বলেন, ‘যখনই তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেই, তখনই তিনি নড়েচড়ে বসেন। অথচ সম্পর্কের পূর্বে যখন আমি বলতাম, আমাদের রিলেশন চারপাশের লোকজন কীভাবে দেখবে? তখন কাউন্সিলর শামিম বলতেন, ‘‘এক নায়িকা যদি গাজীপুরের কাউন্সিলরের সঙ্গে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? ওই নায়িকার থেকেও তো তুমি ভালো। বিয়ে পর আমরা দুজনে মিলে প্রচারণা চালাব।’’ কিন্তু এখন তিনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না।’ 

মেয়েটি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘বিয়ের জন্য চাপ বাড়ানো মাত্রই তিনি বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি হুমকি দেওয়া শুরু করেন। আমি মামলা করতে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। আমি যাওয়ার আগেই কাউন্সিলর থানায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তারপর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একবার শান্ত করালেও পরে তিনি বিয়ে করেননি।’ 

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ডিএনসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডিএম শামিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি আমার সামনে এসে কথা বলেন।’ এই বলেই তিনি কল কেটে দেন। 

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মামলার কাগজ পেয়েছি তিন চার দিন হয়। ভুক্তভোগীর মেডিকেল রিপোর্টের জন্য আমরা হাসপাতালে আবেদন করেছি। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্তের জন্য যা যা করা লাগে করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত