বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৮: ৫৯

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আজ সোমবার উপজেলার মৌচাক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

খবর পেয়ে জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়। 

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রমিকেরা তাদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার করার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। পরে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। 

কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভকিন্তু শ্রমিকেরা দীর্ঘ সময় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় এবং পুলিশের ওপর ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা বাধ্য হয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করি এবং শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিই। পরে বেলা আড়াইটার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।’

শিল্প পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সোমবার সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকার পূর্বানী গ্রুপের করিম টেক্সটাইলের শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ করে। শ্রমিকেরা তাদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করার দাবিতে বিক্ষোভ করে। পেরে তাদের সঙ্গে আশপাশের লগোজ অ্যাপারেলস, হাইড্রো অক্সাইড সোয়েটার কারখানা, এপিএস অ্যাপারেলস ও বে-ফুটওয়ার কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়। 

এক পর্যায়ে শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উভয় দিতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন মহাসড়কেরে চলাচলকারীরা। যানজটে আটকা পড়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা যাত্রী ও চালকেরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। 

জেলা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকেরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে রাজি না হলে বেলা ১টার দিকে মৌচাক তেলিরচালা এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। প্রথমে শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে পরে পুলিশ টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত ও ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কিছু গাড়ি। 

কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভআন্দোলনকারী শ্রমিকদের দাবি, ২০১৮ সাল থেকে একজন হেলপারের বেতন আট হাজার এবং সুপারভাইজারের বেতন ১১ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এরপর আর তাদের কোনো বেতন বাড়ানো হয়নি। তাদের অভিযোগ, বাজারে এক কেজি মুলার দাম ৮০ টাকা, এক কেজি শিমের দাম ১২০ টাকা। তা ছাড়া গ্যাসের দাম বেড়েছে, বাসা ভাড়া বেড়েছে। তাই আমাদের বেতন ২৩ হাজার করতে হবে। বেতন বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করে যাব, পুলিশ যতই আমাদের ওপর আক্রমণ করুক আন্দোলন চলবেই।’ 

করিম টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিক সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের বর্তমানে সর্বনিম্ন মূল বেতন দেওয়া হয় আট হাজার ২০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই টাকায় তাঁদের সংসার চলছে না। তাই আমাদের দাবি সর্বনিম্ন মূল বেতন ২৩ হাজার টাকা করা হোক।’

লগোজ অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক লতা রানি বলেন, ‘আমরা এখন যে বেতন পাই, তা দিয়ে আমরা সংসার চালাতে পারছি না। আমাদের ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল  দিয়ে যে টাকা হাতে থাকে, তা দিয়ে পুরো মাস খাওয়ার খরচ থাকে না। এ কারণে আমাদের ঋণ করে, না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।’

বে–ফুটওয়ার ওয়্যান কারখানা শ্রমিক হেলেনা আক্তার বলেন, ‘এত অল্প বেতনে আমাদের চলতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই আমাদের সর্বনিম্ন বেতন ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে।’  

এ বিষয়ে পূর্বানী গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি) মো. খসরু আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে আমাদের কারখানায় হামলা চালিয়েছে। আমাদের কারখানার শ্রমিকদের উসকানি দিয়েছে এবং ভাঙচুরও করেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত