ইমিগ্রেশনে হযবরল, বিলম্বিত ফ্লাইট

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১০: ৩৮

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনসংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তারা কাজে আসছেন না। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চলছে ইমিগ্রেশন পরিচালনা। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় লাগছে ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শেষ করতে। এতে ফ্লাইট বিলম্বিত হচ্ছে। এ কারণে নিয়মিত ফ্লাইট কমিয়ে এনেছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। ফ্লাইট বাতিলের ঘটনাও ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় গত কয়েক দিনে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪ হাজারের বেশি প্রবাসী কর্মী ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাঁদের সবারই আগে থেকে টিকিট কাটা ছিল। এসব কর্মীর কেউ ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন, কেউ দেশে আসার অপেক্ষায় সৌদি আরবেই আছেন।

বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র বলেছে, সৌদি এয়ারলাইনস ‘অপারেশনাল রিজন’ দেখিয়ে ফ্লাইট বন্ধ করেছে। তবে গুরুত্ব পাচ্ছে উড়োজাহাজ ও ক্রুদের নিরাপত্তা। ইমিগ্রেশন পুলিশের নিয়মিত কর্মকর্তারা কাজে না আসায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ইমিগ্রেশন পরিচালনা করছে। কোনো ফ্লাইটই নির্ধারিত সময়ে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে এমিরেটস এয়ারলাইনস, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের মতো বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো।

এদিকে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর নিয়মিত ফ্লাইট কমায় চালু থাকা ফ্লাইটে আসন সংকট তৈরি হয়েছে। আর নিয়মিত আসন সক্ষমতা কমায় টিকিটের মূল্য বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় যেসব যাত্রী নতুন টিকিট কিনতে চাচ্ছেন, তাঁরা বেশি দাম পরিশোধে বাধ্য হচ্ছেন। গত সপ্তাহেও ঢাকা-রিয়াদ রুটে ওয়ানওয়ে টিকিটের মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা, যা এরই মধ্যে ৬৫ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, চাহিদা বাড়ায় এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটগুলোর টিকিটের সংকট রয়েছে। এ কারণে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীরা পছন্দমতো তারিখের টিকিট পাচ্ছেন না। অনেকেই সৌদি আরব থেকে ফিরতি টিকিট কেটে ছুটিতে এসেছেন। ফ্লাইট বাতিল হওয়ার তথ্য না পাওয়ায় তাঁদের অনেকেই বিমানবন্দরে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। অন্যদিকে আসন কম থাকায় নতুন যাত্রীদেরও বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে।

আবদুস সালাম আরেফ বলেন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় ঢাকার অনেক ট্রাভেল এজেন্সি এখনো অফিস চালু করেনি। এতে করেও টিকিটের তারিখ পরিবর্তন ও নতুন টিকিট কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

উল্লেখ্য, গত মাসে বৈশ্বিকভাবে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার বিপর্যয় এবং দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউর কারণে টানা কয়েক দিন নিয়মিত ফ্লাইট ব্যাহত হয়। টিকিট বিক্রি করতে পারেনি ট্রাভেল এজেন্সিগুলো, যার প্রভাব এখনো কাটেনি। পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সোমবার বিকেল থেকে সব ধরনের ফ্লাইট ৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করা হয়। সেদিন দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হলেও এখনো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারেনি শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বন্ধ
ছুটিতে আসা সৌদিপ্রবাসী আবুল কালামের ঢাকা থেকে জেদ্দা যাওয়ার সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার পর ফ্লাইটটি বাতিলের তথ্য পান তিনি। পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করলে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ তাঁকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের টিকিট দিতে চায়। যদিও আবুল কালামের ভিসার মেয়াদ আছে আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) পর্যন্ত।

একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানান আরেক সৌদিপ্রবাসী মোহাম্মদ রাসেল হাসান বেপারী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে ৫ আগস্ট আমার জেদ্দা যাওয়ার টিকিট ছিল। ওই দিন ইমিগ্রেশন করার পরেও এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে ফ্লাইট বাতিল হওয়ার তথ্য দেয়। সেদিন প্রায় আট ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকা থাকতে হয়েছিল। পরে সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসে যোগাযোগ করলে তারা ২৪ তারিখের ফ্লাইটের টিকিট দিয়েছে।’

ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর তথ্য বলছে, ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে সৌদি এয়ারলাইনস। ‘অপারেশনাল রিজন’ দেখিয়ে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ রাখার বিষয়টি জানিয়েছে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। এই সময়ের মধ্যে যাঁদের আগে থেকে টিকিট কাটা ছিল, সেসব যাত্রীর বিনা ফিতে নতুন তারিখের টিকিট দিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। তবে সেটা অবশ্যই আসন খালি থাকা সাপেক্ষে। ফলে অধিকাংশ যাত্রীই বদলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগামী মাসের আগে কোনো টিকিট পাচ্ছেন না।

সৌদি আরব থেকে ফেরা প্রবাসী খায়ের সুজন গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিট কেটে আমি সৌদি আরবে তিন দিন আটকে ছিলাম। পরে টিকিট পরিবর্তন করে এমিরেটস এয়ারলাইনসের মাধ্যমে দুবাই হয়ে ঢাকায় আসছি।’ তিনি বলেন, ‘রিয়াদ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চলছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে টিকিট পরিবর্তন করে এই দুই এয়ারলাইনসে আসার চেষ্টা করছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত