Ajker Patrika

‘নতুন বছরে সব অসুখ অমঙ্গল কাটিয়ে উঠুক বিশ্ব’

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ২৩
‘নতুন বছরে সব অসুখ অমঙ্গল কাটিয়ে উঠুক বিশ্ব’

১৫ বছর পর দেশে ফিরে বাঙালির সবচেয়ে বড় প্রাণের মেলায় যুক্ত হতে অনেক সকালেই শাহবাগে এসেছেন মৈনাক সরকার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহধর্মিণী লতারাণী সরকার। বয়সের কারণে পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার ভিড় এড়িয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েই দেখেছেন শোভাযাত্রা। এরপর টিএসসি চত্বরে বসে তাঁরা দুজনই চারদিকের রং আর তারুণ্যকে দেখে বারবার ফিরে গেছেন নিজেদের পুরোনো স্মৃতিতে।

মৈনাক সরকার বলেন, ‘১৫ বছর পর দেশে ফিরেছি। দেশের বাইরে বাঙালি কমিউনিটি পয়লা বৈশাখ পালন করে, কিন্তু দেশ তো দেশই। এই যে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এত মানুষ, এত আনন্দ, এখানে এমন একটা ভালো লাগা আর আবহ আছে, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।’

লতারাণী বলেন, ‘বাংলা বছরের এই প্রথম দিনে আমাদের একটাই চাওয়া, সব অসুখ, অমঙ্গল কাটিয়ে উঠুক বিশ্ব। এই নতুন বছর শুধু বাঙালি নয়, সব মানুষের জীবনেই মঙ্গল বয়ে আনুক।’

সরেজমিনে শাহবাগ, রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ধীরে ধীরে এসব এলাকা মুখর হয়ে উঠছিল নবীন-প্রবীণ, শিশু-কিশোর আর দেশি-বিদেশি মানুষের ভিড়ে। এই ভিড়ের প্রতিটি মানুষের মধ্যে ফুটে আছে বাঙালির ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি। এই ভিড়ে কোনো মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। কেউ এসেছেন মঙ্গল শোভাযাত্রায় আনন্দ করতে, কেউ এসেছেন ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। বাবা-মায়ের হাত ধরে নানান বয়সের শিশুরা রঙিন বসনে ঘোরাফেরা করছে।

১২ বছরের অনামিকা মায়ের হাত ধরে এসেছে মঙ্গল শোভাযাত্রার রঙিন পাখিটিকে দেখতে, যা বাঙালির ঐতিহ্যকে ধারণ করে মঙ্গলবার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে হাজার প্রাণের মাঝে। অনামিকা ভালো করে হাঁটতে পারে না।

অনামিকার মা জানান, অনামিকা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। বয়স বেড়ে গেলেও বুদ্ধির দিক থেকে অনামিকা সেই ৭ বছরের শিশুটিই রয়ে গেছে। পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্যকে ধারণ করতে কিংবা এই বৈশাখের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে কোনো আলাদা মানুষ হতে হয় না।

অনামিকার মা বলেন, ‘আমি জানি আমার মেয়েটা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমি তাকে একটি স্বাভাবিক জীবন দিতে চাই। বৈশাখ আমাদের ঐতিহ্য। আমি চাই আমার অন্যান্য ছেলেমেয়ের মতো আমার এই মেয়েটাও বৈশাখকে উদ্‌যাপন করতে শিখুক।’

পরিবারকে নিয়ে বৈশাখ উদ্‌যাপনের উদ্দেশে এসেছেন আনিসুল ইসলাম। তাঁর মেয়েকে পরিয়েছেন লাল রঙের ‘এসো হে বৈশাখ’ লেখা শাড়ি। শাড়ি সামলে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল মেয়ের। তাই মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন আনিসুল ইসলাম।

আনিসুল বলেন, ‘এবারের বৈশাখে মানুষের মধ্যে সেই আগের আনন্দটা দেখতে পাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। মাঝের বৈশাখে বের হতে পারিনি, তাই এবার সকাল সকালই বেরিয়েছি। এই উৎসবটা আসলেই আলাদা, অন্যরকম। রমজানের কারণে পান্তাটা এবার হচ্ছে না, তবুও বৈশাখ সেই চিরচেনা রূপে ফিরে এসেছে। আশা করব, সবাই নতুন বছরে পুরোনো সব ব্যর্থতা, রোগ, শোক কাটিয়ে উঠতে পারব।’

এদিকে উৎসব উপলক্ষে চলছে হরেক রকম জিনিসের বেচাকেনা। সাভার থেকে নাসির এসেছেন ফুলের মুকুট, কাঠের পুতুল, কাঠের একতারা আর খোল নিয়ে। নাসিরের কাছে ভিড় করছেন অনেকেই। কেউ কিনছেন, কেউ দেখছেন আবার কেউ ছবি তুলছেন। কোনোটাতেই না নেই নাসিরের। হাসিমুখে কথা বলছেন ক্রেতাদের সঙ্গে। নববর্ষের শুভেচ্ছাও জানাচ্ছেন।

নাসির বলেন, ‘বেচাকেনার উদ্দেশেই আমি আইছি। দেখি কেমন বেচাবিক্রি হয়। কিন্তু তেমন বিক্রি না হইলেও মনে কোনো কষ্ট হইব না আইজকা। সবাই আইজকা আনন্দ করতে আইছে। তাদের আনন্দ দেইখা আমারও ভালোই লাগতাছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত