এমপি আনোয়ারুল হত্যা: আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন শিলাস্তি রহমান 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ২০: ২৬
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ০৯: ২০

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শিলাস্তি রহমান।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

দুপুরের আগেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র এএসপি মাহফুজুর রহমান শিলাস্তিকে আদালতে হাজির করেন। তিনি এক আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামি শিলাস্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি আনারকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। তিনি আদালতেও দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক।

পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিলাস্তি রহমানকে দীর্ঘক্ষণ সময় দিয়ে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়। সুস্থ স্বাভাবিকভাবে শিলাস্তি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে ম্যাজিস্ট্রেট বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।

ঢাকার আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ মামলায় আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুল, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় গত ৩১ মে। এর আগে গত ২৪ মে এই তিনজনকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পাঁচ দিনের রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শিলাস্তি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন। অন্য দুজন ডিবির হেফাজতে রয়েছেন।

এর আগে সকালে এমপি আনার হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে নেপালে গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয় ঢাকার আদালত থেকে।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান গতকাল রোববার আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তবে আজ পাঠানো হয়।

সিয়াম হোসেনের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানায়। তাঁর গ্রামের নাম কুতুবা। বাবার নাম মো. আলাউদ্দিন। তিনি এমপি আনোয়ারুল আজীমের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। হত্যাকাণ্ডের সময় সিয়ামও ভারতে ছিলেন বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। সিয়াম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর নেপালে পালিয়ে গেছেন বলেও ইতিমধ্যে তদন্ত সংস্থা জানতে পেরেছে।

এমপি আনার হত্যার তদন্তের জন্য গত ১ জুন সকালে নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। দলে ডিবির দুজন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির একজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

সিয়ামকে নেপাল থেকে দেশে ফেরানোর উদ্দেশ্যেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি জানায় পরোয়ানা ইন্টারপোলের মাধ্যমে নেপাল সরকারের কাছে হস্তান্তর করার পর তাঁকে ফেরত আনা সহজ হবে বলেই এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আবেদনেও উল্লেখ করেছেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না করা হলে সিয়ামকে ফেরত আনা সম্ভব হবে না।

আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হওয়ার ঘটনায় গত ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর বাবাকে গুম করার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে তাঁর বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে তাঁর বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্নতা মনে হয়। এরপর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পান।

গত ১৩ মে আনোয়ারুল আজীমের ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেব।’ এ ছাড়া আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো মুনতারিনের বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে বলে এজাহারে বলা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, বাদীর বাবা ভারতে খুন হয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে এখনো বাবার লাশ পাননি তাঁর পরিবার। তাঁর বাবাকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।

আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস।

গত ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার খবর আসে। এরপর তাঁর মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুমের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত