বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা, হাতিয়ার দুই ট্রান্সজেন্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২: ০০
Thumbnail image

বিদেশে লোক পাঠানোর নামে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা অফিস ভাড়া নিতেন। সেই ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলতেন। ‘আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল’ নামের প্রতিষ্ঠানটি কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিত এসব ভুয়া পেজে। বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয়ে যোগাযোগ করলেই প্রতারণার ফাঁদ পেতে অর্থকড়ি হাতিয়ে নিত চক্রটি। অর্থ হাতিয়ে নিয়েই তাঁরা চলে যেতেন আত্মগোপনে। যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দিতেন। এমনকি প্রতারণার প্রয়োজনে চক্রের সদস্যরা লিঙ্গও পরিবর্তন করেন! 

প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করা এমন একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী গোয়েন্দা বিভাগ। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. শরিফুল ইসলাম (৪২), আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা ওরফে হৃদি মাহজাবিন (২৬) ও আহিয়ান শিশির ওরফে কামরুজ্জামান শিশির (২৯)। 

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। 

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৪০টি পাসপোর্ট, ৯টি জাল ভিসা, জাল বিএমইটি কার্ডের ফটোকপিসহ মোবাইল ফোন ও সিম উদ্ধার করা হয়েছে। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত ৭ আগস্ট গুলশান থানায় প্রতারণার একটি মামলা হয়। ওই মামলা তদন্তের সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে চক্রের মূল হোতা ও এজাহারনামীয় আসামি শরিফুল ইসলামকে গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের সক্রিয় সদস্য এজাহারনামীয় আসামি আবরার জাওয়ার তন্ময় ও আহিয়ান শিশিরকে একই দিন রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল নামে গুলশান-১-এ একটি অফিস খোলে। ওই অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন ছদ্মনামে পেজ খুলে বিজ্ঞাপন কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো।

চক্রটি মূলত ছদ্মনাম এবং অন্যের এনআইডি দিয়ে মোবাইল সিম তুলে প্রতারণা করছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তির কুয়েতি ভিসার কপি সংগ্রহ করে ফটোশপের মাধ্যমে বিদেশগামী ব্যক্তির নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে জাল ভিসা তৈরি করত। একই ভাবে অন্যের বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের স্ক্যান কপি সংগ্রহ করে জাল কার্ড তৈরি করত। এসব জাল ভিসা, বিএমইটি ও প্লেনের টিকিট দেখিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে চুক্তির পুরো টাকা হাতিয়ে নিত। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে চক্রটি অর্ধশতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গুলশান থানায় করা মামলার তদন্ত করে একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়েছে। গ্রেপ্তার শরিফুল ইসলামের নামে বিভিন্ন থানায় প্রতারণার চারটি, আবরার জাওয়ারের নামে একটি প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলা আছে। আবরার জাওয়ার তন্ময় ও কামরুজ্জামান শিশির উভয়ই ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তাঁরা লিঙ্গ পরিবর্তন করে বিভিন্ন নাম ধারণ করেন। ডিবির তদন্তে তাঁদের প্রকৃত পরিচয় উদ্ধার হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত