ফেনীর ফুলগাজীতে থাকা মা-বাবার সঙ্গে সর্বশেষ বুধবার রাতে কথা হয় সাকলাইন ইসলামের। এরপর থেকে ওই এলাকার আর কারও সঙ্গেই কথা বলতে পারেননি তিনি। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই তরুণ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টা হয়ে গেল, মায়ের কণ্ঠ শুনছি না। সর্বশেষ যখন কথা হয়, বলেছিলেন, ‘টেনশন করিস না’। তারপর থেকে টেনশনটা আরও বেড়ে গেল। শুনেছি সবাইকে এলাকার স্কুল বিল্ডিংয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু জানি না আদৌ সত্যি কি না।’ 

বন্যাদুর্গত এলাকায় আটকা মানুষগুলোর জন্য এভাবেই দুশ্চিন্তায় প্রতিটি মুহূর্ত পার করছেন স্বজনেরা। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা এবং বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্যাদুর্গত ১০ জেলার ১০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার কাজ করছে না। ফলে টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। 

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, বন্যা কবলিত ১০ জেলার ১৩ হাজার ৪৯১ টি টাওয়ারের মধ্যে ১ হাজার ৪২৮টি টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। 
সচল আছে ১১ হাজার ৮১২টি টাওয়ার। 

ফেনী জেলার প্রায় ৯৪ শতাংশ টাওয়ার কাজ করছে না। এই জেলার ৬৫৩ টাওয়ারের মধ্যে ৬১৬টিই অচল। ফলে ফেনী কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

ফেনী ছাড়াও অন্তত নয় জেলায় বন্যার কারণে টেলিযোগাযোগ সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। জেলাগুলো হলো- নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট। 

বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, যেসব ক্ষেত্রে অপারেটরদের কোরসাইটগুলো পুরোপুরিভাবে পানির নিচে ডুবে আছে, সেসব ক্ষেত্রে পানির লেভেল না নামা পর্যন্ত আপাতত নেটওয়ার্ক সচল করার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা যাচ্ছে না। অপারেটরদের যে সব টাওয়ার বিদ্যুৎ ও জেনারেটরের মাধ্যমে সচল করা সম্ভব হচ্ছে সে সব ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসাধারনের মোবাইল ফোন এবং ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের চার্জিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে মোবাইল অপারেটর এবং টাওয়ার কোঅপারেটরদের টেকনিক্যাল, লোকবল, নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম, জেনারেটর ও জ্বালানিসহ পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় নৌযান সরবরাহ করা হচ্ছে। 

বিটিআরসি বলছে, যে সব জায়গায় অপারেটরদের কোরসাইটসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে সে সব এলাকার নেটওয়ার্ক পুনরুদ্ধার চ্যালেঞ্জিং এবং সময়সাপেক্ষ। সিলেট, মৌলভীবাজার অঞ্চলসমূহের ক্ষেত্রেও বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হওয়ায় যোগাযোগ স্থাপন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।