Ajker Patrika

‘আব্বু ৫০০ টাকা রেখ, আমি আসতেছি’, গুলিতে নিহত সায়েমের শেষ কথা

জহিরুল আলম পিলু ,শ্যামপুর-কদমতলী (ঢাকা)
গুলিতে নিহত সায়েম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
গুলিতে নিহত সায়েম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

‘আব্বু ৫০০ টাকা রেখ, আমি আসতেছি’—এই কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান সায়েম হোসেন (২৩)। যোগ দেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। কিন্তু হঠাৎ করে একটি গুলি এসে তাঁর কপালের ডান পাশ ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। মুহূর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

মো. সায়েম হোসেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কাজ শিখতেন দোলাইরপাড়ের একটি ওয়ার্কশপে। বাবা কবির হোসেন টিটু। পেশায় রড মিস্ত্রি। সায়েম বাবার সঙ্গে থাকতেন কদমতলী থানার মুরাদপুরের কুদরত-ই বাজার এলাকার একটি বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলায়।

কবির হোসেন টিটু হোসেন জানান, সায়েমের ওয়ার্কশপ তিন দিন ছুটি ছিল। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দুপুরের খাবার খেয়ে আসরের নামাজের পর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বেরিয়ে যান যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় আন্দোলনে। বের হওয়ার সময় সে আমাকে বলে, ‘‘আব্বু ৫০০ টাকা রেখ, আমি আসতেছি।’ ’ আমি ওর জন্য টাকা রেখে অপেক্ষা করি। কিন্তু এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমাকে কল দিয়ে জানায়, ‘‘সায়েম গুলিবিদ্ধ হয়ে জুরাইন আদ-দ্বীন হাসপাতালে আছে।”’

কবির হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি একমাত্র আদরের সন্তান লাশ হয়ে পড়ে আছে। তখন তাকে নিয়ে এসে আমার শ্বশুরবাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুরে দাফন করা হয়।’

কবির আরও বলেন, সায়েম সে কথা কম বলত। বাজে কোনো অভ্যাস ছিল না। সকালে কাজে যেত ও রাতে সরাসরি বাসায় আসত। কাজ শিখে তার বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। বিদেশ যাওয়ার কাগজপত্রও রেডি করা হচ্ছিল। সে প্রায় বলত, ‘আব্বু আমি বিদেশ গেলে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। তখন আমি টাকা পাঠাব।’

সায়েমের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তাঁর কক্ষটি খালি পড়ে আছে। স্মৃতি হয়ে সাজানো রয়েছে তাঁর পরনের জামা-কাপড়গুলো।

কবির হোসেন তখন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘একমাত্র সন্তান এভাবে অকালে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে আমি কল্পনা করিনি। ওর শোকে আমি এখনও নিয়মিত কাজ করতে পারি না। চোখের সামনে ওর চেহারা ভেসে উঠে। তার স্মৃতি হিসেবে সেই ৫০০ টাকার নোট এখনও সযত্নে রেখে দিয়েছি।’

কবির আরও বলেন, ‘আমার ছেলে তো কোনো রাজনীতি করত না। কোনো অন্যায় করেনি। তাহলে কেন এভাবে তাকে হত্যা করা হলো? সায়েম দেশের জন্য শহীদ হলেও সরকার থেকে বা অন্য কেউ কোনো খবর নিতে আসেনি। কেউ কোনো সাহায্য সহযোগিতাও করেনি। জামায়াতে ইসলামী দুই লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিল। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত