রাজু ভাস্কর্যের সামনে নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ২১: ৫৭
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪, ২২: ৫০

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’-এর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার বিকেলে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘সলিডারিটি উইথ ফ্রি প্যালেস্টাইম মুভমেন্ট ইন আমেরিকান ইউনিভার্সিটিস’ শিরোনামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংহতি সমাবেশ করেন ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা। 

সংহতি সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। 

সংহতি সমাবেশে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম অপু, শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ, জয়েন উদ্দিন তন্ময়, শেখ তাওহিদ, মিশকাতুল জান্নাত প্রমুখ। 

অধ্যাপক ড. নসরুল্লাহ বলেন, ‘মানবতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনে আমি এসেছি। সারা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়াতে আমি এখানে এসেছি। ফিলিস্তিনের গাজায় যে হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা অতীতের যেকোনো নির্মমতাকে হার মানিয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কখনোই এত সীমিত সময়ে এত বেশি নারী-শিশু মারা যায়নি।’

ড. নসরুল্লাহ আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে বারবার তোলা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর হলে ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ইসরায়েল কখনো এত আগ্রাসী হতো না। কিন্তু সব প্রস্তাব আটকে দিয়েছে আমেরিকা। ফিলিস্তিনকে সহায়তা করতে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নেই, আপনি একজন মানুষ হলেই যথেষ্ট।’  

নেতানিয়াহু ও বাইডেন উভয়কে যুদ্ধাপরাধী উল্লেখ করে নসরুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি মানবতার দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। আন্দোলন শুরু হয়েছে সারা বিশ্বে। আমরা রাষ্ট্রপ্রধানদের ওপর নির্ভর করি না। আমরা নির্ভর করি সাধারণ মানুষের ওপর। আজকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। সারা পৃথিবীকে সেটা আলোড়িত করবে। এই আন্দোলনেই শেষ হবে নেতানিয়াহুর সকল চক্রান্ত, বাইডেনের সকল চক্রান্ত, পশ্চিম ইউরোপের চক্রান্ত।’ এ সময় তিনি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। 

অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, ‘আমাদের অবস্থান মানবতার বিষফোড়ার বিরুদ্ধে, মানবতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের অবস্থান-কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ওয়েল ডকুমেন্টেড জেনোসাইড এটি, পৃথিবীতে যত জেনোসাইড ঘটেছে তার মধ্যে এত ওয়েল ডকুমেন্টেড জেনোসাইড আর ঘটেনি। সে জায়গায় বিশ্বব্যবস্থা এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত। আমরা আমেরিকার মোড়লপনার ব্যাপারে শঙ্কিত। ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর মতো আমেরিকার বাইডেনও সমানভাবে অপরাধী, সেও একজন কিলার।’

শিক্ষক অপু আরও বলেন, ‘আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, সেখানে পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। গুলি চালানো, হামলা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে। এই যে একধরনের ঘৃণা ছড়াচ্ছে, সেই ঘৃণা কতটুকু বিস্তৃত হতে পারে, তার ধারণা নেই। আমরা আশঙ্কা করছি, সেই ঘৃণার চাষাবাদ আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে কি না! আমাদের দেশে ভিন্নমতের কোনো মানুষকে একইভাবে ঘৃণার চাষাবাদ করা হয় কি না...কতটা অমানবিক, কতটা পাশবিক হয়ে গেলে ইসরায়েল এভাবে হামলা চালায়, তা দেখে আমরা শঙ্কিত। এতকিছুর পরেও আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে রয়েছি, মানবতার পক্ষে রয়েছি। আমরা আমাদের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছপা হব না।’ 

বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে ফ্রি ফিলিস্তিনের দাবিতে আন্দোলন ও সংহতি প্রকাশ করার দাবি জানান এ শিক্ষক। 

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, ‘আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, তারাই (আমেরিকা) আবার বড় বড় কথা বলে। তারা আমাদের মানবতার ছবক দেয়। এখন পর্যন্ত চলমান হত্যাকাণ্ডের সময়ে ৩৫ হাজার লোক মারা গেছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে—ইসরায়েলকে মদদদাতা সকল দেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।’ 

শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেটি গ্রহণ করেননি। পাসপোর্ট “ইসরায়েল ব্যতীত” যুক্ত করে দেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে পাসপোর্ট থেকে সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি হলো সেই অ্যাকসেপ্ট ইসরায়েল আবারও সংযুক্ত করতে হবে।’ 

সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত