তল্লা মসজিদে বিস্ফোরণের ২ বছর 

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩: ১৫
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩: ৫৬

শেষ হয়েছে এশার নামাজ। সুন্নত নামাজে মশগুল মুসল্লিরা। খানিক বাদেই বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকা। মসজিদের ভেতর থেকে বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ। যে মুসল্লিরা ছিলেন ইবাদতে মশগুল, তারাই দৌড়ে এসে নর্দমার পানিতে গড়াগড়ি করছিলেন শরীরের জ্বালা-যন্ত্রণা কমাতে।

২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মারুফ। মসজিদ থেকে কাছেই তাঁর মুদি দোকান ছিল। গত বছর ব্যবসা ছেড়ে দিলেও এলাকা ছাড়েননি। যদিও এ ঘটনার পর নিহত ও আহতদের অধিকাংশই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। ফলে পুরো ঘটনা যেন ভুলে যেতে পারলেই ভালো থাকেন বাসিন্দারা। দুঃসহ স্মৃতি আর স্মরণ করতে চান না​।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার তল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে সংঘটিত বিস্ফোরণের দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ৩৪ জনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো মসজিদে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। গ্যাসের লিকেজ থেকে গ্যাস এয়ারটাইট রুমে জমে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। 

বিস্ফোরণের পরপরই ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি ও জেলা প্রশাসন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমা এবং একাধিক সংযোগ ব্যবহার করে সেখান থেকে স্পার্ক করার বিষয়টি উঠে আসে। দায়ী করা হয় মসজিদ কমিটিকেও। মামলার তদন্তভার পরে সিআইডি পুলিশের ওপর। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ২৯ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এতে প্রধান আসামি করা হয় মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়াকে (৬০)। তবে বর্তমানে আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

যে ৩৪ জন নিহত হয়েছিলেন, তাঁরা হলেন তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক নেসারি (৪৮), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫) ও তাঁর ছেলে জুনায়েদ হোসেন (১৬), মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আবদুল হান্নান (৫০), ইমরান (৩০), আবুল বাশার (৫১), মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫), জেলা প্রশাসনের কর্মচারী শামীম হাসান (৪৫), স্থানীয় ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ নাদিম (৪৫), কলেজছাত্র সাব্বির (২১), কলেজছাত্র জোবায়ের (১৮), জুলহাস উদ্দিন (৩০), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের ফরাজী (৭), রাশেদ (৩০), হুমায়ুন কবির (৭২), জামাল আবেদিন (৪০), ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), কলেজছাত্র রিফাত (১৮), মাইন উদ্দিন (১২), জয়নাল (৩৮), নয়ন (২৭), কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), রাসেল (৩৪), বাহার উদ্দিন (৫৫), নিজাম ওরফে মিজান (৪০), আবদুস সাত্তার (৪০), শেখ ফরিদ (২১), নজরুল ইসলাম (৫০), রিফাত (১৮)। 

যা ঘটেছিল সেদিন
প্রতিদিনের মতোই তল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে আসছিলেন মুসল্লিরা। শুক্রবার হওয়ায় মসজিদে মুসল্লি ভরপুর ছিল। জামায়াতে নামাজ শেষে কেউ কেউ বাইরে বের হয়ে আসেন। তবে বেশির ভাগ মুসল্লিই ভেতরে সুন্নাত নামাজ আদায় করছিলেন। এর মধ্যে ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। লোডশেডিং হওয়ার পর বিদ্যুতের সংযোগ বদলানোর সময় বিদ্যুৎ স্পার্ক করলে লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাসে তা ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায়। সঙ্গে সঙ্গেই মসজিদের ভেতরে থাকা মানুষগুলোর শরীর ঝলসে যায়। কারও কারও কোনো কাপড়ও ছিল না। ঝলসে যাওয়া মানুষগুলোকে উদ্ধার করে প্রথমে ভিক্টোরিয়া ও পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩৭ জন রোগীর মধ্যে কয়েকজন সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারলেও ৩৪ জনের জীবন প্রদীপ নিভে যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত