Ajker Patrika

আশুলিয়ায় পোশাকশ্রমিকদের কর্মবিরতি, ১২ কারখানায় ছুটি, ২টি বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সাভার প্রতিনিধি (ঢাকা) 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪৮
আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের কর্মবিরতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের কর্মবিরতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

১৫ শতাংশ হরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো কাজে যোগ দেননি ঢাকার আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় ১২টি কারখানায় সাধারণ ছুটির ঘোষণা করা হয়। আর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় দুটি কারখানা।

এদিকে যেকোনো ধরনের সহিংসতারোধে পুরো শিল্পাঞ্চলে যৌথ বাহিনী সতর্ক অবস্থান ছিল। অনেক জায়গায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।

শিল্প পুলিশ, কারখানা কর্তৃপক্ষসহ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার, নেক্সট কালেকশন, আল মুসলিম ও সেতারা গ্রুপসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা যথাসময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও কাজ করেননি।

কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে হাজিরা নিশ্চিত করার পর বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ানোর দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় কর্তৃপক্ষ সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার কথা বললেও তারা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন।

পুলিশ জানায়, ছুটি ঘোষণার পর হা-মীম ও নিট এশিয়ার শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বের হয়ে গেলেও নিউ এইজ, ডেকো, আল মুসলিম, এথিকালসহ আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বিকেল ৩টা এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কারখানার ভেতরেই বসে ছিলেন।

পুলিশ আরও জানায়, ইনক্রিমেন্ট নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক নাসা ও ট্রাউজার লাইন পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দ ব্যাপারী বিন্দু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার সম্প্রতি ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করেছে। বছরের শুরুতেই শ্রমিকেরা এই ইনক্রিমেন্ট পাবেন বলে জানা গেছে।

‘তাই শ্রমিকদের উচিত হবে কলের চাকা সচল রাখা এবং তৃতীয় পক্ষ কারও ফাঁদে পা না দেওয়া। দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা চিন্তা করে উৎপাদন অব্যাহত রেখে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা। যদি কোনো শ্রমিক উসকানির ফাঁদে পা দেন, তাহলে সেই দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।’

তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিকনেতা বলেন, ‘শ্রমিকেরা কারও ইন্ধনে আন্দোলন করছেন না। নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁরা এই দাবি তুলেছেন। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাতে চলমান বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই ইনক্রিমেন্ট ও ভাতা বাড়ানো সময়ের দাবি।’

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকেরা যখন কোনো দাবি করেন তখন মালিকপক্ষ ব্যবসায় মন্দা বা আইনের কথা বলে শ্রমিকদের দাবি পূরণে অপারগতা প্রকাশ করেন। আর দাবি পূরণ না হলে শ্রমিকেরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন, তখন কারখানার মালিকেরা নানা অজুহাতে কারখানা বন্ধ করে দেন অথবা মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে শ্রমিকদের হয়রানি করেন।’

আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের কর্মবিরতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের কর্মবিরতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ শ্রমিকনেতা আরও বলেন, ‘যেসব কারখানার মালিকেরা ব্যবসা নেই বলে ঢোল পেটান, সেসব কারখানার মালিকদের অনেকেই এই শ্রমিকদের শ্রমে–ঘামে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। একটি কারখানা থেকে একাধিক কারখানার মালিক হয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকেরা সেই এক জায়গাতেই রয়েছেন। বেতন ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট বাড়লেও দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তাদের ধারদেনা করেই সংসার চালাতে হচ্ছে।’

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রমিকেরা মূলত বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট নন, তাই তাঁরা কাজ বন্ধ করে বসে আছেন। আর কাজ না করায় আজ অন্তত ১২টি পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে কোথাও কোনো অরাজকতা কিংবা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত