হরিজন কলোনিতে কাউন্সিলরের কর্মীদের হামলা, আত্মহত্যার হুমকি বাসিন্দাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ২২: ২২

রাজধানীর বংশালে মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে স্থানীয় কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন হামলা চালিয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট কাইজার মোহাম্মদ ফারাবীর উপস্থিতিতে এ হামলা হয়। এ সময় হরিজন কলোনির অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এখন সুবিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত কলোনির বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া তাঁদের আর কোনো পথ নেই! 

আজ বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘মিরনজিল্লা কলোনির হরিজনদের উচ্ছেদ বন্ধ এবং স্থায়ী আবাসন ও অধিকার বাস্তবায়ন শীর্ষক’ নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ), বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ এবং মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে সংলাপের আয়োজন করা হয়। 

মিরনজিল্লার বাসিন্দা সুদামা দাশ বলেন, ‘আমরা ময়লা পরিষ্কার করি বলে তারা হরিজনপল্লিকে থেকে আমাদের ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করছে! এই মেয়র আমাদের বলেছে “তোমরা অবৈধ”। মহামান্য আদালতের নির্দেশনা অমান্য করল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালাল।’ 

বাড়িঘর উচ্ছেদের কারণে আগেও একজন গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছে জানিয়ে সুদামা দাশ বলেন, ‘আমরা আত্মহত্যা করব। শরীরে পেট্রল ঢেলে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেব, আমরা অসহায়।’ 

হরিজনদের পক্ষে রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি বলেন, ‘আমরা মিরনজিল্লা পল্লির হরিজন সম্প্রদায়ের ভূমি রক্ষা কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করছিলাম। সংবাদ সম্মেলন শেষে ম্যাজিস্ট্রেট ও কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন হরিজন পল্লিতে আসেন। এ সময় মিরনজিল্লা পল্লির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয় কাউন্সিলর ও ম্যাজিস্ট্রেটের। তখন কাউন্সিলরের লোকজন পল্লির ভেতরে হামলা চালিয়ে হরিজনদের ঘর–বাড়ি ও মন্দির ভাঙচুর করে। হামলার ঘটনা দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে ঘটে।’ 

অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রের উচিত ছিল হরিজনদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ করা। এটি (হামলা–ভাঙচুর) মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ 

মিরনজিল্লা কলোনির বাসিন্দাদের মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন ড. মিজান। 

বুধবার দুপুরে ডিএসসিসির ম্যাজিস্ট্রেট ও স্থানীয় কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে হরিজল পল্লিতে হামলা হয়। ছবি: সংগৃহীতবাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, মিরনজিল্লা হরিজন অধিবাসী নাগরিক আন্দোলনে যে ভূমিকা পালন করেছে, এটা আমাদের মানবাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। যারা অধিকার আদায়ের জন্য স্বেচ্ছায় আত্মাহুতি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, আপনারা আমাদের নমস্য। 

সংলাপে কাপের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রেবেকা সান–ইয়াতের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন কাজল দেবনাথ, গবেষক আমিনুর রসুল বাবুল, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল প্রমুখ। 

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ–কমিশনার মাহবুব–উজ–জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোডের পাশে মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কাউন্সিলর ও তাঁর কর্মীরা কলোনির ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে তাঁরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’ 

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবীকে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, তিনি হামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত