বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: ‘পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে ছিল বুলেট’

সাইফুল ইসলাম সানি, সখীপুর (টাঙ্গাইল) 
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ৩৬
Thumbnail image

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাদিকুর রহমানের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। ছেলের কথা মনে হলেই ছবি বুকে চেপে ধরে কবরের কাছে চলে যাচ্ছেন সাদিকুরের মা শাহানাজ বেগম। ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ যেনো থামছেই না এই মায়ের। 

সাদিকুরের চাচা প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে ছিল একটি বুলেট।’ সাদিকুরের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুরের সীমান্তবর্তী ঘাটাইল উপজেলার ফুলমালির চালা গ্রামে। 

সাদিকুর রহমান গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ঢাকা উত্তরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে মারা যান। সে আবদুল্লাহপুর এলাকার জামিয়া দ্বীনি ইসলামিয়া মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ঘাটাইলের ফুলমালির চালা গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই সাদিকুর তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে ঢাকার উত্তরা এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ওই দিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে সাদিকুরসহ দুই শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসায় না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দিনভর খোঁজাখুঁজির পর ওই রাতেই বিষয়টি প্রত্যেকের পরিবারকে জানানো হয়। 

পরিবারের লোকজন ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন থানা ও হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে ///শনিবার সন্ধ্যায় জানতে পারেন সাদিকুর মারা গেছেন। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ওই রাতেই পরিবারের লোকজন হাসপাতাল থেকে সাদিকুরের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরের দিন //////রোববার সকালে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

সাদিকুর রহমানের চাচা প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সাদিকুরের পিঠে একটি গুলির চিহ্ন ছিল। একটি বুলেট পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে ছিল। ভয়াবহ আন্দোলনের কারণে আমরা থানায় অভিযোগ করার সাহস পাইনি। এ ছাড়া ওর বাবা বিদেশে থাকেন।’ 

কবরের পাশে ছেলের ছবি হাতে মা শাহনাজ বেগম। ছবি: সংগৃহীত  সাদিকুরের মা শাহানাজ বেগম বলেন, ‘সাদিকুর বলত, “মা আমি একদিন বড় মাওলানা হব, তুমি শুধু আমার জন্যে দোয়া কইরো মা।” ওরা আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হতে দিল না (কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি)। কান্নারত অবস্থায় বিলাপ করে বলতে থাকেন, “বন্দুক দিয়া গুলি কইরা আমার বাবারে মারছে। পেট থেকে বন্দুকের গুলিটাও বের হতে পারে নাই। মৃত্যুর সময় আমার বাবা না জানি কত ছটফট করছে। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই। আমি বর্তমান সরকারের কাছে এর বিচার চাই। আমার মতো শত শত মায়ের বুক যারা খালি করছে তাদের বিচার করুন।”’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘ছেলের জন্য সারা দিন কান্না করে সাদিকুরের মা, পাগলের মতো হয়ে গেছেন। এসব দেখে আমরা যারা প্রতিবেশী স্বজন আছি, তারা খুব কষ্ট পাই। খুব হৃদয়বিদারক ঘটনা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত