ছবিতে গারোদের বড়দিনের ভোজ ও উৎসব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২০: ৪৪
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২১: ১৫

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাস বা বড়দিন। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পালিত হয়। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা নিজস্ব ঐতিহ্য ও রীতি অনুসারে পালন করে এই উৎসব। ময়মনসিংহ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, মধুপুর অঞ্চলে গারো বা মান্দি সম্প্রদায়ের মানুষও তাঁদের নিজস্ব রীতি ও ঐতিহ্য অনুসারে বড়দিন পালন করেন।

টাঙ্গাইলের মধুপুরের রাজবাড়ী নামের একটি গ্রামের বড় দিনের উৎসবের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো সরেজমিনে ঘুরে তুলে এনেছেন আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক মান্দি ডি কস্তা। এই গ্রামে ৪০টি পরিবারের বাস। দুটি ব্যাপটিস্ট ও একটি ক্যাথলিক চার্চের সবাই একসঙ্গে মিলে এই বড় দিনের উৎসব পালন করেন। 

বড় দিনের আগের রাতের কীর্তন
গারো বা মান্দিদের বড় দিনের উৎসব হবে কিন্তু কীর্তন হবে না তা কী করে হয়! গ্রামের ইউপ চিরান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কীর্তন ছাড়া আমাদের বড়দিনের উৎসব কল্পনাই করা যায় না! বড় দিনের আগের রাতে চার্চে বিশেষ প্রার্থনা সভার শেষে গির্জা ঘরেই শুরু হয় কীর্তন।’

রাজবাড়ী ব্যাপ্টিস্ট চার্চে বড় দিনের আগের রাতে গিয়ে দেখা যায়, প্রার্থনা সভার পর চার্চের একটি গানের দল মন্দিরা, ঢোল বাদ্যযন্ত্র সহকারে কীর্তন (জিসাস ক্রাইস্টকে নিয়ে বড় দিনের গান) শুরু করেন। এরপর চার্চ থেকে গান করতে করতে প্রত্যেকটি বাড়িতে যায় এই দল। প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে উঠানে তরুণ, তরুণীরা কীর্তনের সঙ্গে দল বেঁধে তালে তালে গোল হয়ে নাচও করে। এই দলের অনেক সদস্যই ঢাকা সিলেটসহ বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে এসেছেনে। অনেক বাড়িতে এই তরুণ-তরুণী ও শিশুদের দলের জন্য থাকে পিঠাসহ আপ্যায়নের ব্যবস্থা। রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রত্যেকটি বাড়ির উঠানে উঠানে চলে এই কীর্তন। পাশাপাশি চলে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর উৎসব। এবার অবশ্য দেখা গেল ভুভুজেলাও। 

 সকালে পিঠা ও পায়েসের আয়োজন
গ্রামের বাসিন্দা লিতা চিরান সকালে উঠেই সবার জন্য পিঠা বানানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আশপাশের বাড়ি থেকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন অনেকে। প্রত্যেককে আপ্যায়ন করা হয় পিঠা দিয়ে। সঙ্গে থাকে পায়েস অন্যান্য মিষ্টান্ন।

 বড় দিনের প্রার্থনা সভা ও কেক কাটা
সারা রাত কীর্তন করার কারণে একটু দেরিতে সকাল ১১টায় শুরু হয় বড় দিনের চার্চে বিশেষ প্রার্থনা সভা। বাংলা এবং আচিক বা মান্দি ভাষায় বড়দিনের গানে সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে সুর মেলান সবাই। এরপর শিশুদের নিয়ে কাটা হয় কেক। 

huহঠাৎ হনুমানের আগমন
চার্চের সভা চলতেই পাশে এসে হাজির হয় লম্বা লেজের দুটি মুখপোড়া হনুমান। চার্চের আশপাশে গাছগুলোয় ও বাঁশঝাড়ে ছোটাছুটি করতে থাকে তারা। 

4‘পুরা খারি’ দিয়ে এক বাড়িতে পুরো গ্রামের ভোজ
গ্রামের আরেক বাসিন্দা বিলিয়ম চিরান আজকের পত্রিকাকে জানান, পুরা খারি বা শূকরের মাংস দিয়ে বিশেষ এক ধরনের রান্নার নামই হলো ‘পুরা খারি’। এটা মান্দিদের একটি বিশেষ ঐতিহ্যবাহী খাবার। এতে থাকে পুরো একটা শূকরের মাংস, খাবার সোডা, চালের গুঁড়া, কাঁচা মরিচ ও ফাসিম নামের পাহাড়ি পাতা। কেউ শূকর না খেলে থাকে মুরগির মাংসের খারির ব্যবস্থা। 

গারো বা মান্দিদের একটি রীতি হলো—এদিন পুরো গ্রামের মানুষের রান্না একটি বাড়িতেই হয়। একটি বাড়ির বাসিন্দা পুরো গ্রামের খাবারের আয়োজন করে। হ্যারিকসন মানখিন ও শিউলি চিসামের বাড়িতে চলে এবারের বড় দিনের দুপুরের ভোজের আয়োজন। এটা তাঁদের একটি বিশেষ ঐতিহ্য। 

 তানিং গব্বা
তানিং গব্বা বা মগজ ভর্তা। তানিং অর্থ মগজ আর গব্বা অর্থ ভর্তা। শূকরের মগজ, কান ও মাথার চামড়া ও কাঁচা মরিচ পুড়ে বানানো একটি ভর্তার নাম হলো তানিং গব্বা। 

 জাসি গাদ্দা বা শূকরের পা হস্তান্তর
এক বছর পর আবার যে বাড়িতে ভোজ হবে সেই বাড়িতে বড়দিনের জবাই করা শূকরের একটি রানসহ পা আনন্দ মিছিল সহকারে নিয়ে যাওয়া হয়। এটাই হলো জাসি গাদ্দা বা শূকরের পা হস্তান্তর। যদি কোনো পরিবার স্বেচ্ছায় এই খাবারের আয়োজন করতে রাজি হয় তবে তাঁদের সে দায়িত্ব দেয় হয়। নইলে লটারির মাধ্যমে বড় দিনের চার্চের প্রার্থনা সভায় এটি নির্ধারণ করা হয়। জাসি গাদ্দা বা শূকরের পা হস্তান্তরের মাধ্যমে শেষ হয় উৎসব। 

তবে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারিও থাকে গারোদের বিশেষ আয়োজন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত